সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৩৬.
আমি কবি ভূমেন্দ্র গুহ-কে চিনতাম না। চিনতাম ড: বি এম গুহরায়-কে। তখন আমি হেলথ ডাইরেকটরেট-এর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভালাপমেন্ট ব্রাঞ্চে। সহকর্মী ফটিক সেন আর আমি দুজনে টি এ সি বা টেকনিক্যাল অ্যাডভাইশরি কমিটির কাজকর্মের দায়িত্বে। প্রায় প্রতিমাসে টিএসি-র মিটিং। সেই মিটিং-এ প্রদত্ত এবং উপস্থাপিত সমস্য ডকুমেন্ট পেশ করতে হত আমাদের ।
শান্তিময় মুখোপাধ্যায় তখন মেডিক্যাল কলেজে। একদিন বলল আপনি কি জানেন ডা: বি এম গুহরায় হচ্ছেন কবি ভূমেন্দ্র গুহ । ময়ূক-এর ভূমেন্দ্র গুহ। নামটার সঙ্গে পরিচয় ছিল।আমার কবিপত্র-পর্বে স্নেহাকর ভট্টাচার্য-র সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তখনই শুনেছিলাম ময়ূক-এর কথা। ময়ূক-এর জীবনানন্দ-সংখ্যার কথা।জগদিন্দ্র মণ্ডল ভূমেন্দ্র গুহ-র কথা।
আমার অফিস টেবিলে সবসময় কাচের নীচে কবিতাপাক্ষিক - এর বেশ কয়েকটি সংখ্যার মলাট থাকতো। ডা: গুহরায় সেসব নিয়মিত দেখেছেন। কোনোদিন ভুল করেও সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি।
শান্তিময় চিনিয়ে দেওয়ার পর যেদিন প্রথম দ্যাখা হল , বলেছিলাম : আপনি তো খারাপ লোক মশায় ! আপনিই যে ভূমেন্দ্র গুহ আমাকে জানাননি তো।
ডাক্তারবাবু ( পরে এই সম্বোধনটাই মেনে চলতাম) কিছু না বলে হেসেছিলেন মাত্র।
তারপর ফিরে এলেন কবিতায় । কবিতাপাক্ষিক , হ্যাঁ একমাত্র কবিতাপাক্ষিকেই শুরু করলেন কবিতা লেখা।
নিজ উদ্যোগেই কবিতার প্রকাশিত হল কবিতাপাক্ষিক-এর ব্যানারে । আমাদের বিন্দুমাত্র পরিশ্রম করতে হয়নি। ওই সময় শান্তিময়-এরও একটা নতুন কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল।
তখনো আমরা অফসেটের মুখ দেখিনি। ডাক্তরবাবুর কল্যাণে অফসেট চিনেছিলাম। গসেন-এ গিয়েছিলাম। চণ্ডী গাঙ্গুলি-র প্রেস।মানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-এর বাবা। উল্টোদিকের অপেক্ষাকৃত ছোটো একটা প্রেসে।
এর বেশ কিছুদিন পর ' দরগা রোড ' পত্রিকার পরিকল্পনা।
তার আগেই দরগা রোডের বাড়িতে আমাদের নৈশ আড্ডা শুরু হয়ে গেছে। সেই আড্ডায় যাঁরা যেতেন সব মুখ আমার মনে নেই তবে শান্তিময় , কালীকৃষ্ণ গুহ , প্রকাশ কর্মকার , অজয় দাশগুপ্ত সহ আরো অনেকে যেতেন। সব থেকে বেশি মনে আছে নিমাইদার কথা। নিমাইদা ছিলেন ডাক্তারবাবুর দরগা রোডের বাড়ির অল ইন অল।জল বরফ গ্লাস পানীয় এবং খাবারদাবার সবকিছু সময় মতো পৌঁছে যেত নিমাইদার সৌজন্যে ।
একদিন বুকে ব্যথা মতন মনে হল। সোজা মেডিক্যাল কলেজ। ই সি জি করে দিল শান্তিময়। দেখে একটু হেসেছিল মাত্র।
আমি একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা দরগা রোড। ডাক্তারবাবু তখন স্নানযাত্রায়। আমি ইসিজি দ্যাখাতে চাইলাম। উনি সেদিকে তাকালেন না। একটা পেগ রেডি করে বললেন খেতে থাকুন , আমি স্নানটা শেষ করে আসি। প্রায় পনেরো মিনিট পর বাইরে এলেন।আমার তখন গ্লাস ফাঁকা। অন্য কোনো ইভেন্টে মনোযোগ না দিয়ে আমার গ্লাসটা পূর্ণ করে দিলেন।বললেন : এটা শেষ করুন। আমি রেডি হয়ে নিই। অগত্যা। আবার পনেরো মিনিট। একদিকে আমার গ্লাস শৃন্য , অন্যদিকে ডাক্তারবাবুও রেডি।
কথা মতো শুয়ে পরলাম। স্টেথো দিয়ে , হাতের তালু দিয়ে , আঙুল দিয়ে , ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ধরে দেখে। বিড়বিড় করে কিছু কাঁচা খিস্তি। শেষে বললেন : আমি ডাক্তার বি এম গুহরায় বলেদিলাম , এখন কেন , আপনি যতদিন বাঁচবেন আপনার কখনো হার্টের কোনো অসুখ হবে না।
সেই ভরসাতেই এখনো ডাং ডাং করে চালিয়ে যাচ্ছি।
আগামীকাল আরো কিছু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন