শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০

নস্টালজিয়া ২ || পৃথা চট্টোপাধ্যায় || ন্যানো টেক্সট

নস্টালজিয়া ২
পৃথা চট্টোপাধ্যায় 



ঐতিহাসিক এই শহরের কথা ভাবলেই চোখের সামনে যেমন মসজিদ, মন্দির,কালীবাড়ি, ইমামবাড়া, হাজারদুয়ারির ছবি ফুটে ওঠে, কানে ভেসে আসে আজানের সুর তেমনি মনে পড়ে স্রোতস্বিনী গঙ্গার কথা। গঙ্গা নদীর জলস্ফীতি দেখা যেত বর্ষাকালে। কিন্তু বর্ষা  নয় ,আমার মন জুড়ে আছে শীতকাল। এই সময় কুয়াশাঘেরা  ভোরবেলায়  শীতে কাঁপতে কাঁপতে  আমরা প্রায়ই টাটকা ঠান্ডা খেজুরের রস খেতাম।বাগানের গাছ থেকে  মাটির কলসিতে সদ্য পেড়ে আনা সেই খেজুর রসের স্বাদ ও খাওয়ার আনন্দ  ছিল অতুলনীয়। হাড় হিম করা ঠাণ্ডা পড়ত এখানে। আমরা খুব মোটা আর ভারি লেপ গায়ে দিতাম আর মা দুপুরে প্রতিদিন ঐ ভারি লেপ টেনে ছাদে রোদ্দুরে দিত গরম হতে।এখানকার পুরোনো বাড়িগুলোর দেওয়াল ছিল বাংলা ইঁটের তৈরি চওড়া,  কড়ি বারগার সিলিং,খিলানের বারান্দা মোটা থামওয়ালা। আমাদের ঘরগুলো শীতের সময় ফ্রিজের ভেতরের মতো ঠান্ডা হয়ে থাকত। বাবা বরাবর মর্নিংওয়াকে যেত।শীতের হি হি ঠাণ্ডায় এই মর্নিংওয়াকে যাওয়া নিয়ে বাবার সাথে মায়ের প্রায়ই ঝামেলা হত। শীতে সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়েই আমরা শুনতে পেতাম  রাস্তায় দলে দলে লোকজনের  চলাচলের শব্দ। রাস্তার ধারে বাড়ি হওয়ায় কানে আসত তাদের টুকরো কথাবার্তা বা গানের কলি। ক্রমশ ঘোড়ার গাড়ির আওয়াজ আর রিক্শার শব্দ বাড়তে থাকত। শীতকালে প্রচুর ট্যুরিস্ট আসতো এই অতি প্রাচীন ঐতিহাসিক জায়গায় বেড়াতে,  পিকনিক করতে। যাত্রীবোঝাই টাঙাওয়ালা তার হাতের চাবুকের লাঠিটা চাকায় লাগিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ তুলে মনের আনন্দে সেই সাতসকালেই খুব জোরে  গাড়ি ছোটাতো আর শহুরে যাত্রীরা আর্তনাদ করে উঠতো প্রথম টাঙায় চাপার ভয় মিশ্রিত  আনন্দে। পঁচিশে ডিসেম্বর, পয়লা জানুয়ারি বা শীতকালের শনি-রবিবারগুলো  কাটত আমাদের প্রকৃত ছুটির আনন্দে মেলার মজায়। গাছপালায় ঘেরা এই শহরের শীতের  দিনগুলো আরও মোহময় হয়ে উঠত নতুন গুড়ের সৌরভে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...