পূরবী- ৪
অভিজিৎ চৌধুরী
এইসব অনেকদিন আগের কথা।সেই জীবনটা অন্যরকমের।পতিসরের গভীর নির্জনতা আজও টানে।তখন পিতৃদেবকে নিষ্ঠুর মনে হতো তাঁর।মনে হতো কলেজ স্ট্রীট থ্যাকারের দোকানে কতোদিন যাওয়া হয়নি।তবে জীবনের নিয়মেই নতুন বউঠান দূরে সরে যাচ্ছিলেন।
একদিন বেলা এসে বলেছিল,তোমার জন্য তো মস্তো পৃথিবী রয়েচে।আমাদের কি হবে! মা জোড়াসাঁকোর বাড়িতে চলে যেতে চাইছেন।
আড়ালে একজন রইলেন।নাম রেখেছেন - বিজয়া।সান ইসিদ্রোর ছবি উড়ে আসে প্রায়ই।তাঁর সেই নিবেদনে সাড়া দিয়ে এক অন্য রবীন্দ্রনাথের যাত্রা।এদিকে মজা হয়েছে অবন শুরু করেছিল যাত্রাপালা লেখা।ক- দিন ঝোঁক চললো বিস্তর।তারপর আবার ফিরেছে আঁকাতে।
সত্যি বিব্রত হলেন রবীন্দ্রনাথ। তখন গান জমিয়ে দিলে।দিনে কাজ আর কাজ।রাতে গান আর গান।জলি বোটটা পদ্মাপারে বাঁধা থাকত।রথী এখনও বেশ সুন্দর নলে সেইসব দিনের কথা।
একটি যুবক সাঁওতাল নাওয়া খাওয়া ভুলে গাছের গুঁড়ি দিয়ে বিকট সব বানাচ্ছে।নন্দলালের গুমোর ভাঙতে চলেছে বিনোদবিহারী।
কতো মৃত্যু যে দেখতে হলো।মনে হয়েচে এসব কেন!মহাকাল তো সবকিছু হরণ করবে।কোন অতৃপ্তি যেন ঠাঁই নিলো ছবিতে।নিজের অজান্তে ওরা এমন কায়া নিলো যে সকলে চমকে ওঠে।তবে য়ূরোপ নিলো।প্যারিসে আর্ট এক্সিবিশনে বেশ হই হই হলো।
জমে উঠেছে রসের পালাকীর্তন।কিন্তু কোথাও যেন এবার অস্তরাগ টানছে।আত্মহনন প্রবৃত্তি নেই।ওকাম্পোর প্রাণময় উচ্ছ্বলতা যেন বলল,তুমি বিশ্বের কবি।এটুকু প্রয়োজন ছিল।না হলে বাকী ইউরোপ তো তাঁকে পাদরি বলেই জেনেছে।পূরবীর অস্তরাগে পশ্চিমের সুন্দরীর সঙ্গে আর দেখা হবে না।সে বয়ে যাবে নিত্য জীবনের প্রবাহে তবে রবির অস্তমিত আলো মনে কি পড়বে না বিজয়ার!
সংগীত ভবন থেকে ভেসে আসছে তাঁর লেখা গান- যদি জানতেম আমার কিসেরও ব্যথা তোমায় জানাতেম....আঁকা থামিয়ে রেখে শুনছেন তিনি।রানু এসে লাল রং- এর জোব্বাটার ছোট্ট পকেটে লাল পলাশ।
ফুলের স্পর্শে চোখ খুললেন রবীন্দ্রনাথ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন