সৌমিত্র রায় - এর জন্য গদ্য
প্রভাত চৌধুরী
৩৫.
ভিন্ন যে গল্পটি এই কিস্তিতে আমি লিখব ,তা আলাদা ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছি না । মাননীয় পাঠক নিজচোখে তা দেখে নেবেন। এমনটাই আমার বিশ্বাস।
তার আগে অন্য গুটিকয় ঘটনা জেনে রাখুন।মনেও রাখুন। জানা সবকিছুই মনে রাখার আবশ্যিকতা থাকে না। এ-কারণে মনে রাখার সঙ্গে জেনে রাখাকে জুড়ে দিলাম।
1996- এর বইমেলায় কবিতাপাক্ষিক প্রথম অংশ গ্রহণ করে। টেবিলে নয়। কবিতাপাক্ষিক কোনোদিনই লিটল ম্যাগাজিনের জন্য বরাদ্দ টেবিলে বসেনি।এটাও জানানোর প্রয়োজন ছিল।
স্টল নম্বর ছিল : W 443 .
200 স্কোয়ার ফুট স্টল। অর্ধেকটা আমাদের। বাকিটা
' কোরক ' - এর ।
সেবার কবিতাপাক্ষিক প্রকাশ করেছিল মোট ৪৩ টি বই। তার মধ্যে কবিতার বই-এর সংখ্যা ৪০ টি।
আরো উল্লেখ করা যেতে পারে --- কবিতাপাক্ষিক-এর সঙ্গে ছিল অমৃতলোক , হাওয়া ৪৯ , দরগা রোড ,কবিকৃতি , রক্তমাংস ,অর্কেস্ট্রা ,বিজল্প ,দাহপত্র , মোনালিসা , মউল , শিস ,কবিতা দশদিনে প্রমুখ পত্রিকা। ওই স্টলটাই যেন বা লিটল ম্যাগাজিন। মেলার বারোদিন যেন কবির হাট। কবিদের নিজ বাসভূমি।
আমি আসলে লিখতে চাইছিলাম 1997- এর সেই বইমেলার কথা। যে বইমেলায় আমাকে লিখতে হয়েছিল :
আমাদের মুদ্রিত অক্ষর পুড়েছে , কলম পোড়েনি।
সেবার কবিতাপাক্ষিক- এর নিজস্ব স্টল। অবস্থান প্যাভেলিয়নের ভেতর। স্টল দেখে মন ভরে গিয়েছিল। এত সুন্দর তার ডেকোরেশন। তাছাড়া একদম নিজস্ব। কোনো ভাগীদার নেই।
নিজেদের মতো করে স্টল সাজিয়ে নিয়েছিল রজত-শান্তনু ।অর্থাৎ রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।নাসের তো ছিলই।তখন স্টল চালাতো রজত-শান্তনু-রাজা।
মেলার তৃতীয় বা চতুর্থ দিন। মেলা শুরু হয়েছে। স্টল ভর্তি কবিজনেরা। হঠাৎ কানে এল - আগুন লেগেছে। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আকাশে ধোঁয়া। এক কোণের আকাশে। ভাবতেও পারিনি এই আগুনের ক্ষমতা কতটা ! কিছুক্ষণ পর দূরের একটা -দুটো স্টল পুড়তে শুরু করেছে। আমাদের তরুণের আগুনকে কাছ থেকে দেখবে বলে চলে গেছে। আমার সঙ্গে ছিল রজতশুভ্র গুপ্ত। দুর্গাপুরের। আমরা দু-জন তখন স্টলের বই একটা ফাঁকা জায়গায় বের করছি। আমাদের ধারণা হয়েছিল স্টলে আগুন লাগলেও বাইরে বের করে রাখতে পারলে বইগুলোকে বাঁচাতে পারব।
রজতশুভ্র বেশ লম্বা এবং শক্তিশালী।ওর ভরসাতেই প্রায় সব বই স্টল থেকে বাইরে বের করতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমরা আনন্দে মুখর।আমরা আমাদের কাজ সার্থকভাবে সম্পন্ন করছি।
কাজের নেশায় ছিলাম। বুঝতে পারিনি আমরা যখন বই করছিলাম , তখন মেলা জনশূন্য । একজন মানুষ নেই। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আগুন। তিনদিক ঘিরে ফেলেছে আগুন। রজতশুভ্র আমাকে ভরসা দিচ্ছে। আমি রজতশুভ্র-কে। যেদিকে আগুন নেই , কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সেদিকেই হাঁটতে শুরু করলাম দুজন। ওদিকে তো গেট নেই। টিনের দেওয়াল। সেসব ভাবনায় ছিল না। একটা টিনের কিছুটা ফাঁক ছিল। সেই ফাঁক গলে উলটো দিকের বাটা-মাঠে। আমার চেনা মাঠ। ফুটবল খেলেছি।বেঁচে গেলাম। এটুকুই মনে হয়েছিল।
আর এখনো মনে আছে আমার মূর্খামিকে পাত্তা না দিয়ে রজতশুভ্র আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি। সেই ভয়ংকর সময়ে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
বাড়ি ফিরে শুনলাম যূথিকা আমাদের জন্য টিফিন নিয়ে মেলায় গেছে।
সে- গল্প আগামীকাল
প্রভাত চৌধুরী
৩৫.
ভিন্ন যে গল্পটি এই কিস্তিতে আমি লিখব ,তা আলাদা ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছি না । মাননীয় পাঠক নিজচোখে তা দেখে নেবেন। এমনটাই আমার বিশ্বাস।
তার আগে অন্য গুটিকয় ঘটনা জেনে রাখুন।মনেও রাখুন। জানা সবকিছুই মনে রাখার আবশ্যিকতা থাকে না। এ-কারণে মনে রাখার সঙ্গে জেনে রাখাকে জুড়ে দিলাম।
1996- এর বইমেলায় কবিতাপাক্ষিক প্রথম অংশ গ্রহণ করে। টেবিলে নয়। কবিতাপাক্ষিক কোনোদিনই লিটল ম্যাগাজিনের জন্য বরাদ্দ টেবিলে বসেনি।এটাও জানানোর প্রয়োজন ছিল।
স্টল নম্বর ছিল : W 443 .
200 স্কোয়ার ফুট স্টল। অর্ধেকটা আমাদের। বাকিটা
' কোরক ' - এর ।
সেবার কবিতাপাক্ষিক প্রকাশ করেছিল মোট ৪৩ টি বই। তার মধ্যে কবিতার বই-এর সংখ্যা ৪০ টি।
আরো উল্লেখ করা যেতে পারে --- কবিতাপাক্ষিক-এর সঙ্গে ছিল অমৃতলোক , হাওয়া ৪৯ , দরগা রোড ,কবিকৃতি , রক্তমাংস ,অর্কেস্ট্রা ,বিজল্প ,দাহপত্র , মোনালিসা , মউল , শিস ,কবিতা দশদিনে প্রমুখ পত্রিকা। ওই স্টলটাই যেন বা লিটল ম্যাগাজিন। মেলার বারোদিন যেন কবির হাট। কবিদের নিজ বাসভূমি।
আমি আসলে লিখতে চাইছিলাম 1997- এর সেই বইমেলার কথা। যে বইমেলায় আমাকে লিখতে হয়েছিল :
আমাদের মুদ্রিত অক্ষর পুড়েছে , কলম পোড়েনি।
সেবার কবিতাপাক্ষিক- এর নিজস্ব স্টল। অবস্থান প্যাভেলিয়নের ভেতর। স্টল দেখে মন ভরে গিয়েছিল। এত সুন্দর তার ডেকোরেশন। তাছাড়া একদম নিজস্ব। কোনো ভাগীদার নেই।
নিজেদের মতো করে স্টল সাজিয়ে নিয়েছিল রজত-শান্তনু ।অর্থাৎ রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।নাসের তো ছিলই।তখন স্টল চালাতো রজত-শান্তনু-রাজা।
মেলার তৃতীয় বা চতুর্থ দিন। মেলা শুরু হয়েছে। স্টল ভর্তি কবিজনেরা। হঠাৎ কানে এল - আগুন লেগেছে। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আকাশে ধোঁয়া। এক কোণের আকাশে। ভাবতেও পারিনি এই আগুনের ক্ষমতা কতটা ! কিছুক্ষণ পর দূরের একটা -দুটো স্টল পুড়তে শুরু করেছে। আমাদের তরুণের আগুনকে কাছ থেকে দেখবে বলে চলে গেছে। আমার সঙ্গে ছিল রজতশুভ্র গুপ্ত। দুর্গাপুরের। আমরা দু-জন তখন স্টলের বই একটা ফাঁকা জায়গায় বের করছি। আমাদের ধারণা হয়েছিল স্টলে আগুন লাগলেও বাইরে বের করে রাখতে পারলে বইগুলোকে বাঁচাতে পারব।
রজতশুভ্র বেশ লম্বা এবং শক্তিশালী।ওর ভরসাতেই প্রায় সব বই স্টল থেকে বাইরে বের করতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমরা আনন্দে মুখর।আমরা আমাদের কাজ সার্থকভাবে সম্পন্ন করছি।
কাজের নেশায় ছিলাম। বুঝতে পারিনি আমরা যখন বই করছিলাম , তখন মেলা জনশূন্য । একজন মানুষ নেই। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে আগুন। তিনদিক ঘিরে ফেলেছে আগুন। রজতশুভ্র আমাকে ভরসা দিচ্ছে। আমি রজতশুভ্র-কে। যেদিকে আগুন নেই , কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সেদিকেই হাঁটতে শুরু করলাম দুজন। ওদিকে তো গেট নেই। টিনের দেওয়াল। সেসব ভাবনায় ছিল না। একটা টিনের কিছুটা ফাঁক ছিল। সেই ফাঁক গলে উলটো দিকের বাটা-মাঠে। আমার চেনা মাঠ। ফুটবল খেলেছি।বেঁচে গেলাম। এটুকুই মনে হয়েছিল।
আর এখনো মনে আছে আমার মূর্খামিকে পাত্তা না দিয়ে রজতশুভ্র আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি। সেই ভয়ংকর সময়ে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
বাড়ি ফিরে শুনলাম যূথিকা আমাদের জন্য টিফিন নিয়ে মেলায় গেছে।
সে- গল্প আগামীকাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন