রম্যরচনা
ওলোট পালোট
কাশীনাথ সাহা
দমবন্ধ ঘরে আটকে আছি। যা জীবনে শিখতে পারিনি তাই শিখছি। জানতামই না আলু কাটবার পরে ধুতে হয়, টমেটো কাটবার আগে। চা তৈরি করাটা এতো ভাল পারি, আমার চা খেয়ে গিন্নী আর চা করতে ময়দানে নামে না। কতো চেষ্টা করেছি বউয়ের মন রাখতে তবুও মাঝে মাঝে গোল্লা পেয়ে যাচ্ছি। এই সেবার একশো ভাগের এক ভাগও যদি বাবা মায়ের পেছনে খরচ করতাম তাহলে মৃত্যুর পরে স্বর্গবাস কোন মাঈকী লাল ছাড়াতে পারতো না।
বসে আছি বউ করোনাকে উদ্দেশ্য করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই আপদটা যে কবে বিদায় হবে! আমি উদ্দেশ্য না বিধেয় বুঝতে পারলাম না। বউ বাইপাস করে ফেস ওয়াশ করতে চেম্বারে ঢুকে পড়লো।
সেদিন একটু হালকা হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। রিমঝিম গিরে শাওন... ( বাকীটা জানিনা!) কি সুন্দর প্রেম-প্রেম ওয়েদার। সতের বছরের ওল্ড মডেল বউকেই একটু সোহাগ করতে মন চাইলো। কিন্তু উনি মহাভারতে মজে আছেন। ধরা ছোঁয়া দিচ্ছেই না। ডন কো পকাড় না মুশকিল হি নহী নামুনকিন হ্যায়...।বিরক্ত হয়ে বললাম, তুমি একটা যাচ্ছেতাই, ভালবাসার ভ- ও বোঝ না। কিন্তু এ বউ সে বউ নয়। শ্বশুর মশাই উকিল ছিল, সেখান থেকে কথার মারদাঙ্গাটা ভালোই রপ্ত করেছে। বউ বললো, ভালবাসার আমি কিছু বুঝি না? জিজ্ঞেস করে এসো আমাদের পাড়ার শ্যামলদা,অতনুদা,রূপমদাকে! ওরা আমাকে একশোতে একশোদশ দেবে। অনিল কুম্বলের টপস্পিন দিতে গিয়ে শচীনের ওভার বাউন্ডারি খেয়ে ধরাশায়ী হয়ে গেলাম। আর কথা বাড়ালাম না। যুবী-র ছয় বলে ছ'টা ছক্কা এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
বউয়ের জন্মদিনটা এই গাড্ডায় পড়ে গেল। কি দেব! কি দেব ভাবতে ভাবতেই দু'দিন খতম। তৃতীয় দিন মানে জন্মদিনে চারটা মাস্ক কিনে বউকে সোহাগি কণ্ঠে গুনগুনিয়ে বললাম, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ.... তারপরের অধ্যায়টা খুব একটা সুখকর হলো না। বউ পাক্কা সাতাশ ঘন্টা তের মিনিট একান্ন সেকেন্ড সেই মাস্ক পরে সেই যে মৌনব্রত শুরু করলো, তা বলে বোঝানো যাবে না।
কথাবার্তা বন্ধ, রান্না বন্ধ সব লকডাউন!
একা-একা গান গাইছিলাম, এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে নাতো মন... কবে পাবো ওগো তোমার দরশন।( নিমন্ত্রণ টা ভুলে গেছলাম) নিছক ভদ্রলোকের নিপাট নিরামিষাশী সংগীত। বউ কোথায় ছিল, আদা রসুন পেঁয়াজ হলুদ মাখা মুখ নিয়ে
ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ও সায়ন্তনীর দর্শন পাওনি বলে বড্ড মন খারাপ তাই না। বুড়ো হয়ে গেলে এখনো ছুঁকছুঁকানি স্বভাবটা গেল না।
আর একবার তোমার গলায় ওইসব ঢংয়ের গান শুনি তারপর দেখ আমি কি করি! আমার কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ। চৈত্র মাসের ধূ ধূ শিলাবতী.. তবুও ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি করবে? একটু পুরুষোচিত বিক্রম দেখাবার ক্ষীণ প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু ঠিক সময়ে শর্টটা নিতে পারলাম না। চেয়েছিলাম ওমরীশপুরীর মতো থ্রো করতে হয়ে গেল শচীনের কণ্ঠ। বউ বললো, কি করবো বলছি শোন, পাড়ার ঘরে ঘরে বলে আসবো তোমার তিনদিন ধরে হাঁচি হচ্ছে আর জ্বর গা হাত ব্যথা। তারপর বাকীটা আমাকে করতে হবে না, পাড়ার লোকেরাই বুঝে নেবে।
না আর কথা বাড়ালাম না। এরা মা কালীর বংশ পরম্পরা, মুখে যা বলছে তা যদি বাস্তবে করে দেয়, তখন মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেটিয়ে বিদেয় কর হয়ে কোন
মর্গে শিফট হয়ে যাব স্বয়ং ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরও ওই বডির টের পাবে না।
লকডাউনে বডিটা লক করাই ছিল এবার মুখটাও লক করে নিলাম। আর সংগীত? মাথা খারাপ! নেড়া ক'বার বেলতলায় যায়?
ওলোট পালোট
কাশীনাথ সাহা
দমবন্ধ ঘরে আটকে আছি। যা জীবনে শিখতে পারিনি তাই শিখছি। জানতামই না আলু কাটবার পরে ধুতে হয়, টমেটো কাটবার আগে। চা তৈরি করাটা এতো ভাল পারি, আমার চা খেয়ে গিন্নী আর চা করতে ময়দানে নামে না। কতো চেষ্টা করেছি বউয়ের মন রাখতে তবুও মাঝে মাঝে গোল্লা পেয়ে যাচ্ছি। এই সেবার একশো ভাগের এক ভাগও যদি বাবা মায়ের পেছনে খরচ করতাম তাহলে মৃত্যুর পরে স্বর্গবাস কোন মাঈকী লাল ছাড়াতে পারতো না।
বসে আছি বউ করোনাকে উদ্দেশ্য করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই আপদটা যে কবে বিদায় হবে! আমি উদ্দেশ্য না বিধেয় বুঝতে পারলাম না। বউ বাইপাস করে ফেস ওয়াশ করতে চেম্বারে ঢুকে পড়লো।
সেদিন একটু হালকা হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। রিমঝিম গিরে শাওন... ( বাকীটা জানিনা!) কি সুন্দর প্রেম-প্রেম ওয়েদার। সতের বছরের ওল্ড মডেল বউকেই একটু সোহাগ করতে মন চাইলো। কিন্তু উনি মহাভারতে মজে আছেন। ধরা ছোঁয়া দিচ্ছেই না। ডন কো পকাড় না মুশকিল হি নহী নামুনকিন হ্যায়...।বিরক্ত হয়ে বললাম, তুমি একটা যাচ্ছেতাই, ভালবাসার ভ- ও বোঝ না। কিন্তু এ বউ সে বউ নয়। শ্বশুর মশাই উকিল ছিল, সেখান থেকে কথার মারদাঙ্গাটা ভালোই রপ্ত করেছে। বউ বললো, ভালবাসার আমি কিছু বুঝি না? জিজ্ঞেস করে এসো আমাদের পাড়ার শ্যামলদা,অতনুদা,রূপমদাকে! ওরা আমাকে একশোতে একশোদশ দেবে। অনিল কুম্বলের টপস্পিন দিতে গিয়ে শচীনের ওভার বাউন্ডারি খেয়ে ধরাশায়ী হয়ে গেলাম। আর কথা বাড়ালাম না। যুবী-র ছয় বলে ছ'টা ছক্কা এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
বউয়ের জন্মদিনটা এই গাড্ডায় পড়ে গেল। কি দেব! কি দেব ভাবতে ভাবতেই দু'দিন খতম। তৃতীয় দিন মানে জন্মদিনে চারটা মাস্ক কিনে বউকে সোহাগি কণ্ঠে গুনগুনিয়ে বললাম, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ.... তারপরের অধ্যায়টা খুব একটা সুখকর হলো না। বউ পাক্কা সাতাশ ঘন্টা তের মিনিট একান্ন সেকেন্ড সেই মাস্ক পরে সেই যে মৌনব্রত শুরু করলো, তা বলে বোঝানো যাবে না।
কথাবার্তা বন্ধ, রান্না বন্ধ সব লকডাউন!
একা-একা গান গাইছিলাম, এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে নাতো মন... কবে পাবো ওগো তোমার দরশন।( নিমন্ত্রণ টা ভুলে গেছলাম) নিছক ভদ্রলোকের নিপাট নিরামিষাশী সংগীত। বউ কোথায় ছিল, আদা রসুন পেঁয়াজ হলুদ মাখা মুখ নিয়ে
ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ও সায়ন্তনীর দর্শন পাওনি বলে বড্ড মন খারাপ তাই না। বুড়ো হয়ে গেলে এখনো ছুঁকছুঁকানি স্বভাবটা গেল না।
আর একবার তোমার গলায় ওইসব ঢংয়ের গান শুনি তারপর দেখ আমি কি করি! আমার কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ। চৈত্র মাসের ধূ ধূ শিলাবতী.. তবুও ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি করবে? একটু পুরুষোচিত বিক্রম দেখাবার ক্ষীণ প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু ঠিক সময়ে শর্টটা নিতে পারলাম না। চেয়েছিলাম ওমরীশপুরীর মতো থ্রো করতে হয়ে গেল শচীনের কণ্ঠ। বউ বললো, কি করবো বলছি শোন, পাড়ার ঘরে ঘরে বলে আসবো তোমার তিনদিন ধরে হাঁচি হচ্ছে আর জ্বর গা হাত ব্যথা। তারপর বাকীটা আমাকে করতে হবে না, পাড়ার লোকেরাই বুঝে নেবে।
না আর কথা বাড়ালাম না। এরা মা কালীর বংশ পরম্পরা, মুখে যা বলছে তা যদি বাস্তবে করে দেয়, তখন মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেটিয়ে বিদেয় কর হয়ে কোন
মর্গে শিফট হয়ে যাব স্বয়ং ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরও ওই বডির টের পাবে না।
লকডাউনে বডিটা লক করাই ছিল এবার মুখটাও লক করে নিলাম। আর সংগীত? মাথা খারাপ! নেড়া ক'বার বেলতলায় যায়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন