ক্রোধ
দেবব্রত রায়
বাসটার্মিনাসে টিকিট কাউন্টারের মেয়েটা হটাৎ-ই অনিমেষের দিকে পাঁচ-পাঁচটা নখপালিশ রাঙানো লম্বা লম্বা আঙুলের একটা সপাট চড় দেখিয়ে বললো,"আপনার ওই লাউবীজের মতো দাঁতগুলো মাড়ি থেকে ছাড়িয়ে আনতে আমার এক চড়ের বেশি দু-চড় লাগবে না, বুঝলেন! বউ-বোন জ্ঞান নেই,মেয়েছেলে হলেই হলো! ওরাংওটাং,নোংরা বনমানুষ কো -থাকার ! "
এই গরমে বাঁকুড়ার থেকে এতটা পথ ঠেঙিয়ে এসেও কাজটা না হওয়ায় অনিমেষ এমনি -তেই রেগেছিল (যদিও,ঠেঙিয়ে আসা কথাটাএক্ষেত্রে ঠিক এপ্রোপ্রিয়েট নয় বলে অনেকেই হয়তো ফেবুতে প্রতিবাদের সাইক্লোন বইয়ে দেবেন কিন্তু, অনিমেষ তার এই শব্দ প্রয়োগের বিষয়ে একেবারেই অটল অনড়!কারণ, অনিমেষ এতটা পথ বাসে করে এসেছে বটে তবে, পুরো ভাড়া দিয়েও সারাটা পথ তাকে নিজের দুটো ঠ্যাঙের উপর ভরসা করেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হয়েছে! অতএব, এক্ষেত্রে ঠেঙিয়ে শব্দটি অনিমেষের মতে শুধু, সঠিকই নয়, একেবারে দুহাজার শতাংশ সঠিক!যাইহোক, কাজটা হলে তবুও ঠিক ছিল কিন্তু, সেটাও হয়নি!) তারউপর এই ধরনের অভদ্রোচিত নোংরা কথাবার্তা! কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! অনিমেষ ভেতরে ভেতরে ক্রমশ ভিসুভিয়াস হয়ে উঠছিল ফলে, যা হওয়া উচিৎ তাই হলো! টিকিটকাউন্টারের মেয়েটা থামবার আর সুযোগই পেলোনা , অনিমেষ তার আগেই একেবারে অ্যাটম -বোমার মতো বার্স্ট করলো! সমস্ত হিতাহিতজ্ঞান ভুলে আপনি আজ্ঞের থেকে একেবারে তুই - তো কা রি তে নেমে এলো ! দাঁতমুখ খিঁচিয়ে, ঘুষি পাকিয়ে লাফাতে লাফাতে অনিমেষ গাঁকগাঁক করে চিৎকার করে উঠলো, " অ্যাই অসভ্য-জানোয়ার মেয়েছেলে, কাকে কী বলছিস রে! আমাকে তুই চিনিস? বেরিয়ে আয়, কাউন্টার থেকে বেরিয়ে আয় বলছি! আমার লাউবিচির মতো দাঁত! আমি ওরাংওটাং! "
তীব্র গরমের দুপুরেও ওদের মূলত, অনিমেষের চিল -চিৎকারে বাসটার্মিনাসের এদিকওদিক ছাওয়ায় মাথা গুঁজে থাকা বেশকিছু লোক ততক্ষণে টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে হাজির হয়েছে ! অনিমেষ এতক্ষণধরে লাফিয়ে ঝাপিয়ে এখন হ্যা হ্যা করে একটু দম নিচ্ছিল ! একটা লোক ওর পাশে দাঁড়িয়ে ফুট কাটলো। বললো, " আইব্বাপ, দুদ্দিন চাগরি কত্তে না কত্তেই টেম্পো দেকচেন মেয়েছ্যানাটার! "
গ্লোবালওয়ার্মিংয়ের প্রোভোকেশনে তখন দু-পক্ষই চরম উত্তেজনায় ফুটছে আর, তারই মধ্যে লোকটা ফুট কাটতেই, অনিমেষ দড়াম করে একটা পেল্লায় ঘুষি বসিয়ে দিল কাউন্টারের বাইরের দিকে থাকা কাঠের ডেস্কটার উপর ! উত্তেজনার এইরকম একটা চরম সিকোয়েন্সে
আরও ভয়ংকর এবং সেল্ফি তোলার মতোই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে ভেবে পাবলিক ক্রমেই বেশ রসোসিক্ত হয়ে উঠছিল কিন্তু, কাউন্টারের মেয়েটি হটাৎ-ই যেন রণে ভঙগ দিল!ভেতরের সমস্ত হাওয়া বেরিয়ে যাওয়া তোবড়ানো ফুটবলের মতোই সে কাচুমাচু মুখে খানিকক্ষণ অনিমেষের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর, টিকিট কাউন্টারের সামনে জমা হওয়া ভীড়টাকে এবং স্বয়ং অনিমেষকেও একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা করে দিয়ে তার ঝাপঝুপো চুলের আড়ালে ঢাকা থাকা কানের ভেতর থেকে হেডফোনের দুটো ছোট ছোট স্পীকার বের করে আনলো তারপর, অনিমেষের দিকে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো," আমাকে দুটো মিনিট সময় দিন.... আসলে,একটা বাজে লোক ফোনে খুব ডিস্টার্ব করছে..... প্লিজ, কিছু মনে করবেন না! "
অনিমেষে একটু আগেই কিছু বলার জন্য বোধহয়,
হা-ব্যাদান হয়েছিল কিন্তু, হটাৎ-ই এমন একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ তো বেরোলোইনা এমনকী, ভারতবর্ষের ম্যাপের মতো হা হয়ে যাওয়া নিজের মুখটাও সে বন্ধ করতেই যেন ভুলে গেলো!
টিকিট কাউন্টারের সামনে জমা হওয়া ভীড়টা পাতলা হতে বেশি সময় লাগলো না! কেউ কেউ তো সেল্ফি তুলতে না পেরে অনিমেষ এবং কাউন্টারের মেয়েটির দিকে এমনভাবে তাকাতে লাগলো যেন ওরা খুন করার মতোই একটা সঙ্গীন অপরাধ করেছে! শুধু, একজন বুড়ি কপালে হাত ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে বললো, কী জানে বাবা কী যুগ এলো! আগে জানতাম নারদঠাকুরই দেবতাদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে বেড়ায়,এখন দেখছি তোমাদের ফোনও....
দেবব্রত রায়
বাসটার্মিনাসে টিকিট কাউন্টারের মেয়েটা হটাৎ-ই অনিমেষের দিকে পাঁচ-পাঁচটা নখপালিশ রাঙানো লম্বা লম্বা আঙুলের একটা সপাট চড় দেখিয়ে বললো,"আপনার ওই লাউবীজের মতো দাঁতগুলো মাড়ি থেকে ছাড়িয়ে আনতে আমার এক চড়ের বেশি দু-চড় লাগবে না, বুঝলেন! বউ-বোন জ্ঞান নেই,মেয়েছেলে হলেই হলো! ওরাংওটাং,নোংরা বনমানুষ কো -থাকার ! "
এই গরমে বাঁকুড়ার থেকে এতটা পথ ঠেঙিয়ে এসেও কাজটা না হওয়ায় অনিমেষ এমনি -তেই রেগেছিল (যদিও,ঠেঙিয়ে আসা কথাটাএক্ষেত্রে ঠিক এপ্রোপ্রিয়েট নয় বলে অনেকেই হয়তো ফেবুতে প্রতিবাদের সাইক্লোন বইয়ে দেবেন কিন্তু, অনিমেষ তার এই শব্দ প্রয়োগের বিষয়ে একেবারেই অটল অনড়!কারণ, অনিমেষ এতটা পথ বাসে করে এসেছে বটে তবে, পুরো ভাড়া দিয়েও সারাটা পথ তাকে নিজের দুটো ঠ্যাঙের উপর ভরসা করেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আসতে হয়েছে! অতএব, এক্ষেত্রে ঠেঙিয়ে শব্দটি অনিমেষের মতে শুধু, সঠিকই নয়, একেবারে দুহাজার শতাংশ সঠিক!যাইহোক, কাজটা হলে তবুও ঠিক ছিল কিন্তু, সেটাও হয়নি!) তারউপর এই ধরনের অভদ্রোচিত নোংরা কথাবার্তা! কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! অনিমেষ ভেতরে ভেতরে ক্রমশ ভিসুভিয়াস হয়ে উঠছিল ফলে, যা হওয়া উচিৎ তাই হলো! টিকিটকাউন্টারের মেয়েটা থামবার আর সুযোগই পেলোনা , অনিমেষ তার আগেই একেবারে অ্যাটম -বোমার মতো বার্স্ট করলো! সমস্ত হিতাহিতজ্ঞান ভুলে আপনি আজ্ঞের থেকে একেবারে তুই - তো কা রি তে নেমে এলো ! দাঁতমুখ খিঁচিয়ে, ঘুষি পাকিয়ে লাফাতে লাফাতে অনিমেষ গাঁকগাঁক করে চিৎকার করে উঠলো, " অ্যাই অসভ্য-জানোয়ার মেয়েছেলে, কাকে কী বলছিস রে! আমাকে তুই চিনিস? বেরিয়ে আয়, কাউন্টার থেকে বেরিয়ে আয় বলছি! আমার লাউবিচির মতো দাঁত! আমি ওরাংওটাং! "
তীব্র গরমের দুপুরেও ওদের মূলত, অনিমেষের চিল -চিৎকারে বাসটার্মিনাসের এদিকওদিক ছাওয়ায় মাথা গুঁজে থাকা বেশকিছু লোক ততক্ষণে টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে হাজির হয়েছে ! অনিমেষ এতক্ষণধরে লাফিয়ে ঝাপিয়ে এখন হ্যা হ্যা করে একটু দম নিচ্ছিল ! একটা লোক ওর পাশে দাঁড়িয়ে ফুট কাটলো। বললো, " আইব্বাপ, দুদ্দিন চাগরি কত্তে না কত্তেই টেম্পো দেকচেন মেয়েছ্যানাটার! "
গ্লোবালওয়ার্মিংয়ের প্রোভোকেশনে তখন দু-পক্ষই চরম উত্তেজনায় ফুটছে আর, তারই মধ্যে লোকটা ফুট কাটতেই, অনিমেষ দড়াম করে একটা পেল্লায় ঘুষি বসিয়ে দিল কাউন্টারের বাইরের দিকে থাকা কাঠের ডেস্কটার উপর ! উত্তেজনার এইরকম একটা চরম সিকোয়েন্সে
আরও ভয়ংকর এবং সেল্ফি তোলার মতোই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে ভেবে পাবলিক ক্রমেই বেশ রসোসিক্ত হয়ে উঠছিল কিন্তু, কাউন্টারের মেয়েটি হটাৎ-ই যেন রণে ভঙগ দিল!ভেতরের সমস্ত হাওয়া বেরিয়ে যাওয়া তোবড়ানো ফুটবলের মতোই সে কাচুমাচু মুখে খানিকক্ষণ অনিমেষের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর, টিকিট কাউন্টারের সামনে জমা হওয়া ভীড়টাকে এবং স্বয়ং অনিমেষকেও একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা করে দিয়ে তার ঝাপঝুপো চুলের আড়ালে ঢাকা থাকা কানের ভেতর থেকে হেডফোনের দুটো ছোট ছোট স্পীকার বের করে আনলো তারপর, অনিমেষের দিকে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো," আমাকে দুটো মিনিট সময় দিন.... আসলে,একটা বাজে লোক ফোনে খুব ডিস্টার্ব করছে..... প্লিজ, কিছু মনে করবেন না! "
অনিমেষে একটু আগেই কিছু বলার জন্য বোধহয়,
হা-ব্যাদান হয়েছিল কিন্তু, হটাৎ-ই এমন একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ তো বেরোলোইনা এমনকী, ভারতবর্ষের ম্যাপের মতো হা হয়ে যাওয়া নিজের মুখটাও সে বন্ধ করতেই যেন ভুলে গেলো!
টিকিট কাউন্টারের সামনে জমা হওয়া ভীড়টা পাতলা হতে বেশি সময় লাগলো না! কেউ কেউ তো সেল্ফি তুলতে না পেরে অনিমেষ এবং কাউন্টারের মেয়েটির দিকে এমনভাবে তাকাতে লাগলো যেন ওরা খুন করার মতোই একটা সঙ্গীন অপরাধ করেছে! শুধু, একজন বুড়ি কপালে হাত ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে বললো, কী জানে বাবা কী যুগ এলো! আগে জানতাম নারদঠাকুরই দেবতাদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে বেড়ায়,এখন দেখছি তোমাদের ফোনও....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন