শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

নিমগাছ || রুদ্র কিংশুক || গল্প

ছোটোদের গল্প :

নিমগাছ
রুদ্র কিংশুক

বাড়ি ছেড়ে যত দূরেই যাওয়া হোক না কেন বাড়ি আমাদের ছেড়ে যায় না । বহুকাল হল লেখাপড়া আর চাকরির কারণে সমুদ্রগড়ের কাছে আমাদের সেই গ্রাম আর আমাদের মাটির বাড়িটা ছেড়ে নরেন্দ্রপুর, কলকাতা, শান্তিনিকেতন, আরামবাগ --- কত জায়গাতেই আমি থাকলাম। কিন্তু বুকের মধ্যে আমার ঠাকুরদার তৈরি করা সেই মাটির বাড়িটা আজও জেগে আছে। তার স্মৃতি আর গল্পগুলো আমার বুকের ভেতরে এক টুকরো কাপড়ে বাঁধা লাউ-কুমড়োর বীজের মতো তুলে রাখা আছে।  হয়তো কোন শরতের সকালে যখন শিউলি ঝরবে,  তারা হঠাৎ আমার বুকের মাটিতে  ছড়িয়ে পড়বে , ছবির মতো ফুটে উঠবে । কখনও ঝমঝম বর্ষার রাতে তারা আমাকে সবাই বলে:  ফিরে আয়।

তো সেই বাড়িটার একটা গল্প বলি শোনো। বাড়ির ঈশান কোনে একটা বড় নিমগাছ ছিল । সেই নিম গাছের পাশে যে ঘরটা সেই ঘরটাতেই আমি রাত্রে ঘুমোতাম। প্রতিদিন  রাত তিনটের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটত ওই গাছে ।গ্রীষ্ম বর্ষা শীত--- সব ঋতুতেই প্রতিদিন  অই একই সময়ে একটা ঝড় কোথা থেকে এসে উপস্থিত হত গাছের ওপর। প্রচন্ড জোরে দূলে উঠতো ডালপালা।কিছুক্ষন প‍র আবার সবকিছু শান্ত হয়ে যেত। প্রতিদিন আমি বাতাসের শব্দে জেগে উঠতাম।

কথাটা গ্রামের অনেকেই জেনে গেল। সবাই বলাবলি করত কোন নিশি হয়তো হাওয়ার  রূপ ধরে প্রতিদিন আসে ওই নিমগাছে। আমাদের গ্রামের  জাহ্নবী চক্রবর্তী । গ্রামের লোক তাঁকে পণ্ডিতমশাই বলতো। তিনি অনেক ভেবে চিন্তে  বিধান দিলেন। ঈশান কোণে রয়েছে কোন প্রেতাত্মা ।ভোরবেলার ওই সময় ঝড় হয়ে আসে আবার চলে যায় ।ঝড় তুলে সে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় ।তাঁর পরামর্শে বাবা একদিন লোকজন ডেকে এনে নিমগাছটা কেটে ফেলল। বাড়ির ঈশানকোনটা একেবারে খাঁ খাঁ করতে লাগলো। আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল ।কিন্তু আশ্চর্য এই যে সেদিন থেকে আর কোনদিন ওই সময়ে ওঠা সেই দমকা বাতাস আর এলো না।

 এখন আমাদের সেই পুরনো বাড়িটা কত বদলে গেছে! এখানে ওখানে একতলা দোতলা তিন-চারটে বাড়ি। সেই ফাঁকা মুথাঘাসে ঢাকা হাঁস-ডাকা উঠানটাও আর নেই ।  আমার নাভিমূল পোঁতা আছে  এই উঠানে। নাভিমূল কী জানো তো তোমারা? সেই নাড়ি- সুতো  যেটা দিয়ে আমি মাতৃগর্ভে মায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মাটির পাত্রে রাখা নাভিমূল- রাখা উঠানের ওই জায়গাটা আমার বড়ো ভালো লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওই মাটি থেকে কোন একদিন একদিন আমি একটা গন্ধরাজ লেবু গাছে জন্মাবো। পুরনো বাড়িটার ঈশান কোণে মাটির ঘরটা কিন্তু এখনো আছে। কতদিন পর আজ চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠী আর গাজনে গ্রামে ফিরে এসেছি। ওই ঘরটার অবস্থা জরাজীর্ণ । তবুও  সবার অলক্ষ্যে বহুকাল বন্ধ ঘরে একবার ঢুকলাম। একটা অদ্ভুত গন্ধে আমার বুক ভরে উঠলো ।মনে পড়ে গেল সেই নিশি-পাওয়া নিমগাছটার কথা । ইথারে তার পাকা হলুদ ফলগুলো ফুলের মতো ফুটে আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...