গল্প || পরিযায়ী
কমল কৃষ্ণ কুইলা
ডাইনিং টেবিল।
মা প্রতিমা আর ছোট ছেলে রাজু পাশাপাশি বসে আনন্দে রাতের আহার গ্রহণ করছেন।
মা আর একটা মাছ হবে.....রাজু বলল।
ওটা তোর দাদার জন্য তোলা আছে।
কি যে বল মা। দাদা এখন গুজরাটে। ফিরবে তবে তো।
মা কারুর কথায় কান দেয় না। রোজই মা বড় খোকার জন্য রান্না করা খাবার তুলে রাখে। বাসি হলে পুকুরে ফেলে দেয়। কাউকেই দেয়না।
এতোটাই ছেলেকে স্নেহ করেন মা।
মা মনে আছে তো। কাল সকালে কোথায় যাব।
ও হ্যাঁ ভালো কথা বলেছিস বাবা।
খাওয়া শেষ হলে ফোনটা নিয়ে আয়। রমাপদ বাবুর সঙ্গে রাতেই কথা সেরে নিই।
অতঃপর খাওয়া শেষ করে রাজু রমাপদবাবুকে কল করে মাকে ধরিয়ে দেয়।
এই নাও মা রিং হচ্ছে কথা বল।
হ্যালো আমি প্রতিমা বলছি। কেমন আছেন।
আমরা সবাই ভালো আছি।
সকালেই আমরা আসছি। আপনার মেয়েকে রেডি রাখুন। দেখে একেবারে পাকা কথা সেরে আসব চিন্তা নেই। গিয়ে বাকী কথা হবে কেমন। ওকে।
নমস্কার। রাখছি দাদা। শুভরাত্রি।
পরেরদিন রাজুকে এবং গ্রামের দুজন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
দুবার গাড়ি পাল্টানোর পর অবশেষে মেয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছান।
এদিকে রমাপদবাবু উঠোনেই পাইচারি করছিলেন।
কখন আসবে সবাই।
দেখতে দেখতে সবাই এসে পৌঁছে যান।
অতিথি আপ্যায়নের সব ব্যবস্থাই করে রেখেছিলেন রমাপদবাবু।
সবাই পায়ে জল দিয়ে পা মুছে বাড়িতে প্রবেশ করেন।
মেয়ের মা নিজের হাতে সবাইকে সরবত পরিবেশন করেন। এবং সবাই তৃপ্তিভরে তা পান করেন।
এবার রমাপদবাবু তার মেয়েকে নিয়ে আসেন। সুন্দর সাজগোজ ও শাড়িতে খুবই সুন্দরী দেখাচ্ছিল সোমাকে।
সোমা এসে সকলকে ভক্তিভরে প্রণাম করার পর নম্রতার সঙ্গে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
এদিকে একে একে জিজ্ঞাসা পর্ব শেষ হবার পর পুনরায় সোমা সবাইকে প্রণাম সেরে প্রস্থান করে।
মেয়ে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় প্রতিমা দেবী খুবই খুশী।
বলল তার বড় ছেলে ফিরলেই আশীর্বাদের ডেট জানিয়ে দেবে।
সৌজন্য বিনিময়ের প্রতিমা দেবী সবাইকে নিয়ে রওনা দেন।
খোকা পা চালিয়ে চল্। তোর দাদা কতদূর এলো ফোন করতে হবে। বাড়িতে ফেরা আশীর্বাদ পর্ব সেরে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে নেব।
তোর দাদার বিয়েটা দিতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত হই। না কি বলিস খোকা।
ঠিকই বলেছ মা। আমিও চাই খুব তাড়াতাড়ি দাদার বিয়েটা হয়ে যাক্। বৌদি বাড়িতে আসুক।
সন্ধ্যায় রাজু তার দাদাকে ফোনে ধরিয়ে মাকে দেয়।
হ্যালো হ্যালো আমি তোর মা বলছি। আর কতদূর?
অন্যদিকে মাকে হ্যালো টুকু বলার পরেই বিমলের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কেননা মোবাইলে চার্জ শেষ।
মা চিন্তা করবে এই বিমল তার সমস্ত কষ্টের কথা লুকিয়ে যায়। কোনো গাড়ি না পেয়ে পা-গাড়িতেই ভরসা করে রেল লাইন ধরে হাঁটতে থাকে।
সমস্ত দোকান পাট বন্ধ। খাবার কোথাও মেলেনি। বোতলে একটু জল আছে। খিদে পেলেই সে একটু করে জল পান করে।
খালি পেটে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে শরীর এতোটাই ক্লান্ত যে। পা ফেটে রক্ত পড়ছিল।
বাধ্য হয়ে অন্যান্য সঙ্গীদের সঙ্গে সেও রেললাইনের উপর বসে পড়ে। একটু জিরিয়ে নেওয়া যাকে বলে। কেননা আবার হাঁটা যে শুরু করতে হবে।
বসতে বসতে কখন যে সবার চোখ লেগে গেছে কে জানে। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
এমন সময় কোন্ অজানা ট্রেন হঠাৎ করেই এসে পড়ে তাদেরকে পিষে দিয়ে চলে যায়।
ঘুমের ঘোরে কারুরই হর্নের শব্দ কানে আসেনি।
দেহ খন্ড বিখন্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরে লোকাল থানার পুলিশ এসে দেহখন্ডগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করে।
এদিকে ফোনে না পেয়ে মায়ের খাওয়া ঘুম বন্ধ। মায়ের মন অজানা আশঙ্কায় কাঁদতে থাকে।
দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে বিমল আর বেঁচে নেই। রেল লাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পুলিশ সত্য ঘটনা চেপে যায় গণবিক্ষোভের ভয়ে।
বিমলের প্যাকিং করা ডেডবডি এসে পৌঁছায়। সঙ্গে সমস্ত গ্রামবাসীরাও।
সবাই বলাবলি করছে ছেলেটা বাড়িতে ফিরলেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তার মা সব আয়োজন পাকা করে ফেলেছিল। আসলে ওর কপালে নেই আর কি করা যাবে। কপালের লিখন কেউই খন্ডাতে পারেনা।
ছেলের ডেডবডি দেখার পর মায়ের যা মূর্ছা গেছে। আর জ্ঞান ফিরল না। ডাক্তার হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। একসময় নাড়ি স্পন্দনও স্থির হয়ে গেল।
পুত্রশোকে মা পরলোক গমন করলেন। রাজ দুজনের মুখেই আগুন দিল। হারাল মা এবং দাদাকে। এখন সে পুরোপুরিই একা। একাকী নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। সে আর দাদার ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে তার নেই।
সে মনে মনে শুধু নিজের দারিদ্র্যতাকেই ধিক্কার জানাতে থাকে।
কমল কৃষ্ণ কুইলা
ডাইনিং টেবিল।
মা প্রতিমা আর ছোট ছেলে রাজু পাশাপাশি বসে আনন্দে রাতের আহার গ্রহণ করছেন।
মা আর একটা মাছ হবে.....রাজু বলল।
ওটা তোর দাদার জন্য তোলা আছে।
কি যে বল মা। দাদা এখন গুজরাটে। ফিরবে তবে তো।
মা কারুর কথায় কান দেয় না। রোজই মা বড় খোকার জন্য রান্না করা খাবার তুলে রাখে। বাসি হলে পুকুরে ফেলে দেয়। কাউকেই দেয়না।
এতোটাই ছেলেকে স্নেহ করেন মা।
মা মনে আছে তো। কাল সকালে কোথায় যাব।
ও হ্যাঁ ভালো কথা বলেছিস বাবা।
খাওয়া শেষ হলে ফোনটা নিয়ে আয়। রমাপদ বাবুর সঙ্গে রাতেই কথা সেরে নিই।
অতঃপর খাওয়া শেষ করে রাজু রমাপদবাবুকে কল করে মাকে ধরিয়ে দেয়।
এই নাও মা রিং হচ্ছে কথা বল।
হ্যালো আমি প্রতিমা বলছি। কেমন আছেন।
আমরা সবাই ভালো আছি।
সকালেই আমরা আসছি। আপনার মেয়েকে রেডি রাখুন। দেখে একেবারে পাকা কথা সেরে আসব চিন্তা নেই। গিয়ে বাকী কথা হবে কেমন। ওকে।
নমস্কার। রাখছি দাদা। শুভরাত্রি।
পরেরদিন রাজুকে এবং গ্রামের দুজন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
দুবার গাড়ি পাল্টানোর পর অবশেষে মেয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছান।
এদিকে রমাপদবাবু উঠোনেই পাইচারি করছিলেন।
কখন আসবে সবাই।
দেখতে দেখতে সবাই এসে পৌঁছে যান।
অতিথি আপ্যায়নের সব ব্যবস্থাই করে রেখেছিলেন রমাপদবাবু।
সবাই পায়ে জল দিয়ে পা মুছে বাড়িতে প্রবেশ করেন।
মেয়ের মা নিজের হাতে সবাইকে সরবত পরিবেশন করেন। এবং সবাই তৃপ্তিভরে তা পান করেন।
এবার রমাপদবাবু তার মেয়েকে নিয়ে আসেন। সুন্দর সাজগোজ ও শাড়িতে খুবই সুন্দরী দেখাচ্ছিল সোমাকে।
সোমা এসে সকলকে ভক্তিভরে প্রণাম করার পর নম্রতার সঙ্গে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
এদিকে একে একে জিজ্ঞাসা পর্ব শেষ হবার পর পুনরায় সোমা সবাইকে প্রণাম সেরে প্রস্থান করে।
মেয়ে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় প্রতিমা দেবী খুবই খুশী।
বলল তার বড় ছেলে ফিরলেই আশীর্বাদের ডেট জানিয়ে দেবে।
সৌজন্য বিনিময়ের প্রতিমা দেবী সবাইকে নিয়ে রওনা দেন।
খোকা পা চালিয়ে চল্। তোর দাদা কতদূর এলো ফোন করতে হবে। বাড়িতে ফেরা আশীর্বাদ পর্ব সেরে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে নেব।
তোর দাদার বিয়েটা দিতে পারলেই আমি নিশ্চিন্ত হই। না কি বলিস খোকা।
ঠিকই বলেছ মা। আমিও চাই খুব তাড়াতাড়ি দাদার বিয়েটা হয়ে যাক্। বৌদি বাড়িতে আসুক।
সন্ধ্যায় রাজু তার দাদাকে ফোনে ধরিয়ে মাকে দেয়।
হ্যালো হ্যালো আমি তোর মা বলছি। আর কতদূর?
অন্যদিকে মাকে হ্যালো টুকু বলার পরেই বিমলের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কেননা মোবাইলে চার্জ শেষ।
মা চিন্তা করবে এই বিমল তার সমস্ত কষ্টের কথা লুকিয়ে যায়। কোনো গাড়ি না পেয়ে পা-গাড়িতেই ভরসা করে রেল লাইন ধরে হাঁটতে থাকে।
সমস্ত দোকান পাট বন্ধ। খাবার কোথাও মেলেনি। বোতলে একটু জল আছে। খিদে পেলেই সে একটু করে জল পান করে।
খালি পেটে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে শরীর এতোটাই ক্লান্ত যে। পা ফেটে রক্ত পড়ছিল।
বাধ্য হয়ে অন্যান্য সঙ্গীদের সঙ্গে সেও রেললাইনের উপর বসে পড়ে। একটু জিরিয়ে নেওয়া যাকে বলে। কেননা আবার হাঁটা যে শুরু করতে হবে।
বসতে বসতে কখন যে সবার চোখ লেগে গেছে কে জানে। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
এমন সময় কোন্ অজানা ট্রেন হঠাৎ করেই এসে পড়ে তাদেরকে পিষে দিয়ে চলে যায়।
ঘুমের ঘোরে কারুরই হর্নের শব্দ কানে আসেনি।
দেহ খন্ড বিখন্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরে লোকাল থানার পুলিশ এসে দেহখন্ডগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করে।
এদিকে ফোনে না পেয়ে মায়ের খাওয়া ঘুম বন্ধ। মায়ের মন অজানা আশঙ্কায় কাঁদতে থাকে।
দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে বিমল আর বেঁচে নেই। রেল লাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পুলিশ সত্য ঘটনা চেপে যায় গণবিক্ষোভের ভয়ে।
বিমলের প্যাকিং করা ডেডবডি এসে পৌঁছায়। সঙ্গে সমস্ত গ্রামবাসীরাও।
সবাই বলাবলি করছে ছেলেটা বাড়িতে ফিরলেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তার মা সব আয়োজন পাকা করে ফেলেছিল। আসলে ওর কপালে নেই আর কি করা যাবে। কপালের লিখন কেউই খন্ডাতে পারেনা।
ছেলের ডেডবডি দেখার পর মায়ের যা মূর্ছা গেছে। আর জ্ঞান ফিরল না। ডাক্তার হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। একসময় নাড়ি স্পন্দনও স্থির হয়ে গেল।
পুত্রশোকে মা পরলোক গমন করলেন। রাজ দুজনের মুখেই আগুন দিল। হারাল মা এবং দাদাকে। এখন সে পুরোপুরিই একা। একাকী নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। সে আর দাদার ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার ইচ্ছে তার নেই।
সে মনে মনে শুধু নিজের দারিদ্র্যতাকেই ধিক্কার জানাতে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন