গল্প
ঘরবন্দি
কমল কৃষ্ণ কুইলা
ডাইনিং টেবিল।
ডিনার পরিবেশন ও খাওয়া চলছে সপরিবারে জোরকদমে।
মা: খোকা মাছ আর এক পিস দিই।
খোকা: না না মা থাক। ওটা বোনকে দিও।
মা: না না তুই খা। যা বলছি তাই শোন।
বোন: মা একদম ঠিক কথা বলছে বুঝলি। আমার এক পিসেই হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমি মাছ খুব একটা পছন্দ করি না তুই তো জানিস।
খোকা: আচ্ছা মা। বোন যখন বলছে দাও আর কি করা যাবে। খেয়েই নি। তারপর যা হয় দেখা যাবে।
মা: খেতে বসে আবার কি হল খোকা। অমন অলক্ষুণে কথা বলছিস কেন!
খোকা: বলব না! চারিদিকে যা ঘটছে সবই তো জানো মা।
টিভি খুললেই একটাই খবর। নতুন করে করোনা আক্রান্ত, মৃত্যু, লকডাউন অমান্য, রেশনে খাদ্য চুরি, করোনা কিট কেলেঙ্কারি, পলাতক ঋণখেলাপিদের ঋণ মুকুব ইত্যাদি ইত্যাদি।
বুঝলে তো মা রাগে ঘেন্নায় মাথা গরম হয়ে যায়। রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। মারি কি মরি অবস্থা। ছিঃ ধিক্কার জানাই অমন অপদার্থ সরকারকে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মা: এতো রাতে আবার কে!
আশ্চর্য। আমার ছেলেটাকে একমুঠো শান্তিতে খেতেও দেবেনা দেখছি।
খোকা : ও কথা বলতে নেই মা। মানুষ নিশ্চয়ই বিপদে পড়েছে। নইলে এতো রাতে ফোন করবে কেন।
মা ফোনটা নিয়ে এসো।
মা ফোন আনতে এগিয়ে যায় কিন্তু ফোনটি কেটে যায়।
খোকা : আবার ঠিকই করবে।
সঙ্গে সঙ্গে রিং বেজে ওঠে।
মা ফোনটি নিয়ে এসে খোকার হাতে দেয়।
খোকা : নমস্কার। কে বলছেন। হ্যাঁ আমি আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলছি।
আমি এখন খেতে বসেছি স্যার। খাওয়া সেরে রিং ব্যাক করছি কেমন।
ওকে ওকে।
খাওয়া শেষ করে খোকা বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে নেন।
এরপর বিছানায় এসে বসেন। হাতে ফোন।
ঐ নং এ ডায়াল করার পর.....
খোকা: হ্যাঁ স্যার এবার বলুন। হ্যাঁ হ্যাঁ এবার ফ্রি হয়েছি।
খোকা: কি বলছেন কি! দুদিন খাওয়া নেই!
নিশ্চয়ই সাহায্য তো করবই। আমাকে পুরো বিষয়টি পরিস্কার করে বলুন....
ফোনের অপর প্রান্তে।
লকডাউনে গৃহবন্দী এক অসহায় অভুক্ত পরিবারের হাহাকার।
অভুক্ত মানুষ : হ্যালো স্যার। আমার নাম গোবিন্দ দাস। আমি একজন দিনমজুর। দিন আনি দিন খাই। আমার বউ বাবুর বাড়িতে ঝিএর কাজ করে।
করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে এখন তো লকডাউন চলছে। কাজকর্ম সবই বন্ধ। এবার খাব কিভাবে বলুন। দুজন ছোট বাচ্চা আছে।
আমরা তো এখানে ভাড়া বাড়িতে থাকি। রেশন কার্ড আছে বাড়িতে। তাই রেশন থেকে কোনো চাল পাওয়ার ব্যপার নেই। খুবই খাদ্য সংকটে আছি স্যার। দয়া করে আমাদের বাঁচান স্যার।
বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেললেন।
খোকা: আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আলো ট্রাস্ট আপনাদের পাশে ছিল আছে থাকবেও।
দেখছি কি করা যায়।
রাখুন একটু পরে আবার করছি।
মা: কি হয়েছে রে খোকা।
খোকা : জানো তো মা কলকাতা থেকে ফোন এসেছিল। ওদের বাড়ি আসলে। কর্মসূত্রে কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে থাকে।
দিনমজুরী করে। ওনার বউ বাবুর বাড়িতে ঝিএর কাজ করে। এখন লকডাউনে গৃহবন্দী। কাজকর্ম সবই বন্ধ। যে টুকু সঞ্চয় ছিল ফুরিয়ে গেছে। ফোন করে হেল্প চাইছে। দুজন বাচ্চাকে নিয়ে অনাহারে আছে।
বোন : এ বাবা দেখ দাদা দেখ যদি কিছু হেল্প করা যায়।
মা: বোন ঠিকই বলেছে। আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করে দে খোকা।
খোকা: ওটাই তো ভাবছি মা। কিভাবে কি করা যায়।
খোকা বসে ভাবছে। পাশে বসে মা ও বোন।
খোকা : আচ্ছা মা যদি
৫ কেজি চাল
১ কেজি ডাল
১ কেজি পেঁয়াজ
৫০০ গ্রাম নুন
১ কেজি মুড়ি
২ কেজি আলু
৫০০ গ্রাম সয়াবিন
১ ট্রে ডিম
৫০০ গ্রাম সরষে তেল
১ প্যাকেট বিস্কুট
এইসব একসাথে রেডি করে যদি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কেমন হবে।
মা: খুবই ভালো হবে খোকা।
বোন : হ্যাঁ রে দাদা। খুবই ভালো হবে।
খোকা: তবে মা এটাই ফাইনাল করছি।
খোকা : হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন। আপনার জন্য কি কি রেডি করেছি একটু শুনুন.....
৫ কেজি চাল
১ কেজি ডাল
১ কেজি পেঁয়াজ
৫০০ গ্রাম নুন
১ কেজি মুড়ি
২ কেজি আলু
৫০০ গ্রাম সয়াবিন
১ ট্রে ডিম
৫০০ গ্রাম সরষে তেল
১ প্যাকেট বিস্কুট
কি হবে তো।
এগুলো নিয়ে আপাতত চালান। পরে আবার দেখছি।
আগামীকাল আপনার বাড়িতে লোক চলে যাবে কেমন। আপনার হাতে এই জিনিস গুলো কিনে দিয়ে আসবে কেমন। একদম চিন্তা করবেন না।
অভুক্ত : কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
খোকা: কোনো ধন্যবাদ দিতে হবে না। ধন্যবাদ ঈশ্বরকে দিন। আমরা সারা বছর ধরেই সারা বাংলা জুড়ে কাজ করি। মানুষের পাশে থাকি। এটা আমাদের কর্তব্য।
রাখছি তাহলে....
এই পলাশ শোন। তোর বাড়ির কাছাকাছি একটা পরিবার অনাহারে আছে। শোন শোন তোকে পরে ডিটেলস বলব। এখন আমি তোর account এ কিছু টাকা transfer করছি। আর ফর্দ পাঠাচ্ছি।
তুই ফর্দ ধরে ঐ জিনিস গুলো কিনে ঐ ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিতে হবে। কেমন। ঠিকানা টিও তোর wp এ দিচ্ছি।
পলাশ: ওকে বস...
পলাশ খোকার ফর্দ অনুযায়ী সবকিছুই ঠিকঠাক কিনে নিয়ে ঐ ভদ্রলোকের বাসায় হাজির হয়।
পলাশ: কই বাড়িতে কেউ আছেন?
অভুক্ত : ও আপনি এসে গেছেন। ভিতরে আসুন।
পলাশ: জিনিস গুলো ধরুন। এখন ভিতরে যাওয়ার সময় নয়।
আর একটা কথা লকডাউন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঘরবন্দী থাকতেই হবে। জরুরী দরকারে যদি বেরোতেই হয় তবে মুখে মাস্ক পরতেই হবে এবং কাউকে স্পর্শ করা চলবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
মনে রাখবেন এভাবেই আমরা করোনা ভাইরাসকে হারাতে পারব। এর অন্য কোনো উপায় নেই।
আসছি কাকু....
অভুক্ত : এসো বাবা এসো...
ঈশ্বর তোমাদের আশীর্বাদ করুক।
তোমরা অনেক বড় হও বাবা অনেক বড় হও।
ঘরবন্দি
কমল কৃষ্ণ কুইলা
ডাইনিং টেবিল।
ডিনার পরিবেশন ও খাওয়া চলছে সপরিবারে জোরকদমে।
মা: খোকা মাছ আর এক পিস দিই।
খোকা: না না মা থাক। ওটা বোনকে দিও।
মা: না না তুই খা। যা বলছি তাই শোন।
বোন: মা একদম ঠিক কথা বলছে বুঝলি। আমার এক পিসেই হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমি মাছ খুব একটা পছন্দ করি না তুই তো জানিস।
খোকা: আচ্ছা মা। বোন যখন বলছে দাও আর কি করা যাবে। খেয়েই নি। তারপর যা হয় দেখা যাবে।
মা: খেতে বসে আবার কি হল খোকা। অমন অলক্ষুণে কথা বলছিস কেন!
খোকা: বলব না! চারিদিকে যা ঘটছে সবই তো জানো মা।
টিভি খুললেই একটাই খবর। নতুন করে করোনা আক্রান্ত, মৃত্যু, লকডাউন অমান্য, রেশনে খাদ্য চুরি, করোনা কিট কেলেঙ্কারি, পলাতক ঋণখেলাপিদের ঋণ মুকুব ইত্যাদি ইত্যাদি।
বুঝলে তো মা রাগে ঘেন্নায় মাথা গরম হয়ে যায়। রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। মারি কি মরি অবস্থা। ছিঃ ধিক্কার জানাই অমন অপদার্থ সরকারকে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মা: এতো রাতে আবার কে!
আশ্চর্য। আমার ছেলেটাকে একমুঠো শান্তিতে খেতেও দেবেনা দেখছি।
খোকা : ও কথা বলতে নেই মা। মানুষ নিশ্চয়ই বিপদে পড়েছে। নইলে এতো রাতে ফোন করবে কেন।
মা ফোনটা নিয়ে এসো।
মা ফোন আনতে এগিয়ে যায় কিন্তু ফোনটি কেটে যায়।
খোকা : আবার ঠিকই করবে।
সঙ্গে সঙ্গে রিং বেজে ওঠে।
মা ফোনটি নিয়ে এসে খোকার হাতে দেয়।
খোকা : নমস্কার। কে বলছেন। হ্যাঁ আমি আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলছি।
আমি এখন খেতে বসেছি স্যার। খাওয়া সেরে রিং ব্যাক করছি কেমন।
ওকে ওকে।
খাওয়া শেষ করে খোকা বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে নেন।
এরপর বিছানায় এসে বসেন। হাতে ফোন।
ঐ নং এ ডায়াল করার পর.....
খোকা: হ্যাঁ স্যার এবার বলুন। হ্যাঁ হ্যাঁ এবার ফ্রি হয়েছি।
খোকা: কি বলছেন কি! দুদিন খাওয়া নেই!
নিশ্চয়ই সাহায্য তো করবই। আমাকে পুরো বিষয়টি পরিস্কার করে বলুন....
ফোনের অপর প্রান্তে।
লকডাউনে গৃহবন্দী এক অসহায় অভুক্ত পরিবারের হাহাকার।
অভুক্ত মানুষ : হ্যালো স্যার। আমার নাম গোবিন্দ দাস। আমি একজন দিনমজুর। দিন আনি দিন খাই। আমার বউ বাবুর বাড়িতে ঝিএর কাজ করে।
করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে এখন তো লকডাউন চলছে। কাজকর্ম সবই বন্ধ। এবার খাব কিভাবে বলুন। দুজন ছোট বাচ্চা আছে।
আমরা তো এখানে ভাড়া বাড়িতে থাকি। রেশন কার্ড আছে বাড়িতে। তাই রেশন থেকে কোনো চাল পাওয়ার ব্যপার নেই। খুবই খাদ্য সংকটে আছি স্যার। দয়া করে আমাদের বাঁচান স্যার।
বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেললেন।
খোকা: আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আলো ট্রাস্ট আপনাদের পাশে ছিল আছে থাকবেও।
দেখছি কি করা যায়।
রাখুন একটু পরে আবার করছি।
মা: কি হয়েছে রে খোকা।
খোকা : জানো তো মা কলকাতা থেকে ফোন এসেছিল। ওদের বাড়ি আসলে। কর্মসূত্রে কলকাতায় ভাড়া বাড়িতে থাকে।
দিনমজুরী করে। ওনার বউ বাবুর বাড়িতে ঝিএর কাজ করে। এখন লকডাউনে গৃহবন্দী। কাজকর্ম সবই বন্ধ। যে টুকু সঞ্চয় ছিল ফুরিয়ে গেছে। ফোন করে হেল্প চাইছে। দুজন বাচ্চাকে নিয়ে অনাহারে আছে।
বোন : এ বাবা দেখ দাদা দেখ যদি কিছু হেল্প করা যায়।
মা: বোন ঠিকই বলেছে। আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করে দে খোকা।
খোকা: ওটাই তো ভাবছি মা। কিভাবে কি করা যায়।
খোকা বসে ভাবছে। পাশে বসে মা ও বোন।
খোকা : আচ্ছা মা যদি
৫ কেজি চাল
১ কেজি ডাল
১ কেজি পেঁয়াজ
৫০০ গ্রাম নুন
১ কেজি মুড়ি
২ কেজি আলু
৫০০ গ্রাম সয়াবিন
১ ট্রে ডিম
৫০০ গ্রাম সরষে তেল
১ প্যাকেট বিস্কুট
এইসব একসাথে রেডি করে যদি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কেমন হবে।
মা: খুবই ভালো হবে খোকা।
বোন : হ্যাঁ রে দাদা। খুবই ভালো হবে।
খোকা: তবে মা এটাই ফাইনাল করছি।
খোকা : হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন। আপনার জন্য কি কি রেডি করেছি একটু শুনুন.....
৫ কেজি চাল
১ কেজি ডাল
১ কেজি পেঁয়াজ
৫০০ গ্রাম নুন
১ কেজি মুড়ি
২ কেজি আলু
৫০০ গ্রাম সয়াবিন
১ ট্রে ডিম
৫০০ গ্রাম সরষে তেল
১ প্যাকেট বিস্কুট
কি হবে তো।
এগুলো নিয়ে আপাতত চালান। পরে আবার দেখছি।
আগামীকাল আপনার বাড়িতে লোক চলে যাবে কেমন। আপনার হাতে এই জিনিস গুলো কিনে দিয়ে আসবে কেমন। একদম চিন্তা করবেন না।
অভুক্ত : কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
খোকা: কোনো ধন্যবাদ দিতে হবে না। ধন্যবাদ ঈশ্বরকে দিন। আমরা সারা বছর ধরেই সারা বাংলা জুড়ে কাজ করি। মানুষের পাশে থাকি। এটা আমাদের কর্তব্য।
রাখছি তাহলে....
এই পলাশ শোন। তোর বাড়ির কাছাকাছি একটা পরিবার অনাহারে আছে। শোন শোন তোকে পরে ডিটেলস বলব। এখন আমি তোর account এ কিছু টাকা transfer করছি। আর ফর্দ পাঠাচ্ছি।
তুই ফর্দ ধরে ঐ জিনিস গুলো কিনে ঐ ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিতে হবে। কেমন। ঠিকানা টিও তোর wp এ দিচ্ছি।
পলাশ: ওকে বস...
পলাশ খোকার ফর্দ অনুযায়ী সবকিছুই ঠিকঠাক কিনে নিয়ে ঐ ভদ্রলোকের বাসায় হাজির হয়।
পলাশ: কই বাড়িতে কেউ আছেন?
অভুক্ত : ও আপনি এসে গেছেন। ভিতরে আসুন।
পলাশ: জিনিস গুলো ধরুন। এখন ভিতরে যাওয়ার সময় নয়।
আর একটা কথা লকডাউন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঘরবন্দী থাকতেই হবে। জরুরী দরকারে যদি বেরোতেই হয় তবে মুখে মাস্ক পরতেই হবে এবং কাউকে স্পর্শ করা চলবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
মনে রাখবেন এভাবেই আমরা করোনা ভাইরাসকে হারাতে পারব। এর অন্য কোনো উপায় নেই।
আসছি কাকু....
অভুক্ত : এসো বাবা এসো...
ঈশ্বর তোমাদের আশীর্বাদ করুক।
তোমরা অনেক বড় হও বাবা অনেক বড় হও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন