দীনেশ দাশ
কবি দীনেশ দাশ (৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৩ – ১৩ মার্চ ১৯৮৫) এক আবর্তসংকুল সময়খণ্ডের এক উল্লেখযোগ্য কবি। সে সময়কাল গত শতকের চল্লিশের দশক। সে ছিল বাংলার এক দুঃস্বপ্নের সময়। ভীষ্ম পিতামহের মতো বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতিকে দীর্ঘ প্রতিপালনের পর কবিগুরু প্রয়াত হলেন। দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধে শত্রুপক্ষ একেবারে সদর দরজায় এসে হানা দিয়েছিল। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে (পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে কুখ্যাত) কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। তাড় পর ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ও স্বাধীনতা ও দেশ বিভাজনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা।
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় মাত্র পনেরো বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধীর লবণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে সাময়িক ভাবে লেখাপড়ায় ছেদ ঘটে। এক বছর বাদে আবার শিক্ষার জগতে ফিরে এসে ১৯৩০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩২তে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বিপ্লবাত্মক স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। ১৯৩৩ সালে বিএ ক্লাসে ভর্তি হলেও সেই বিপ্লবী আন্দোলন ও সাহিত্য চর্চার জন্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারলেন না। ১৯৩৩ সালে দেশ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৫ সালে খয়েরবাড়ি চা বাগানে চাকরির সূত্রে কারশিয়াং চলে আসেন। সেখানে গান্ধীবাদী মতাদর্শের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৩৬ সালে বানপন্থী মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে মার্ক্স, এঙ্গেলস, রালফ ফক্সের রচনা পাঠ করে এক নতুন ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। এই চিন্তামানসই তাঁর কবিতাকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করেছে আমৃত্যু। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সাড়াজাগানো ‘কাস্তে’ কবিতা। এই কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায় এবং তিনি প্রায় রাতারাতি মেহনতী মানুষের জীবনযন্ত্রণা প্রকাশের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। ‘কাস্তে’ কবিতায় শুক্ল পক্ষের পঞ্চমীর বাঁকা চাঁদটাকে তিনি শ্রমজীবী কৃষকের ফসল কাটার ক্ষুরধার অস্ত্র কাস্তের সঙ্গে তুলনা করেন। যে চাঁদ এত কাল কাব্যজগতে প্রেম ও সৌন্দর্যের লাবণ্যময় প্রতীক ছিল তাকে তিনি খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামের হাতিয়ার করে তুললেন। এমন একটি বৈপ্লবিক চিন্তার তিনিই পথিকৃৎ।
পরবর্তী সময়ে বামপন্থী মতধারার আরেক কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটির সঙ্গে তুলনা করে অমরত্ব পেয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন