পোস্টমডার্ন ও কাব্যযোগ
মুরারি সিংহ
(২)
যোগের সময়
হিসেবে ঊষাকালকে বেছে নেওয়া হয়। কারণ সারা রাত ঘুমের মধ্যে দিয়ে শরীর ও মন বিশ্রাম
নেবার পর সেই ব্রাহ্ম-মুহুর্তে তারা
আবার নতুন করে জেগে ওঠে। ধরিত্রীও জেগে ওঠে আরেক নতুন সম্ভাবনা নিয়ে। জেগে ওঠে
পাখি ও প্রকৃতি। বাতাস অনেকতাই কলুষ-মুক্ত থাকে। সেখানে অকসিজেনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
বিশেষ করে ফাঁকা মাঠে। সুতরাং এই সময়ে যোগাভ্যাস করাটা সব দিক দিয়েই বেশ ইতিবাচক। আর যোগ ব্যাপারটাও শুধু মনের সঙ্গে মনের
মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তা হয়ে যায় মনের সঙ্গে প্রকৃতির যোগ পৃথিবীর যোগ বা আর
একটু বিস্তারে গেলে মহাপৃথিবীর যোগ। যা মনকেও প্রসারিত করে, মনের
উদারতা বাড়ায়, মনের
গ্রহণক্ষমতাও কিছু বেড়ে যায়। মানুষের ব্যক্তিত্ত্বও উন্নত হয়।
এরপর যদি
খানিক অতীতের পাতা ওলটাই তাহলে দেখতে পাব যোগ ব্যাপারটা ভারতীয় ঐতিহ্যে বেশ
প্রাচীন। ভারতীয় সভ্যতার আদিপর্বে এদেশে যখন আর্য-আগ্রাসন
শুরু হয়নি, অর্থাৎ
সেই হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর
আমলেও যে যোগের চর্চা ছিল মাটি খুঁড়ে তার পাথুরে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে
আমি সিন্ধু-সভ্যতার
সেই প্রাচীন ধ্যানি-মূর্তিটির
কথা পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, পশু-পরিবৃত সেই মূর্তিতিকে গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা আদিতম
যোগি-মূর্তি
হিসেবে চিহ্নিত করে তার নাম দিয়েছেন পশুপতি। কেউ কেউ তার মধ্যে শিবের আদিরূপটিকেও
খুঁজে পেয়েছেন, যদিও তখন
বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য
ধর্মের সূচনা হয়নি। নানান চিহ্ন-প্রকরণ দেখে অনুমান করা যায় প্রাচীন সিন্ধু-উপত্যকা
বা অনার্য-ভারতের
জনগণের মধ্যে তন্ত্রধর্মের প্রচলন ছিল, যা একেবারেই লোকায়তিক। যোগ সেই তন্ত্রধর্মেরই একটা
অংশ।
এই
উপমাহাদেশে আর্য-যুগ শুরু
হবার পরেও উপরতলার প্রাতিষ্ঠানিক বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সমান্তরালে প্রান্তিক
জনপদে লোকসমাজে তন্ত্রধর্মই চালু ছিল। আর্য-অনার্য সংঘাত ও সমন্বয়ের প্রক্রিয়ায়
ধীরে ধীরে সেই তন্ত্রধর্মের ঊর্ধগমন হয় এবং লোকসমাজে তার জনপ্রিয়তার চাপে
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মও সেই তন্ত্রকে আত্তীকরণ ও আত্মস্যাৎ-এর চেষ্টা
করে এবং সেটি ঘটে বৌদ্ধধর্মের হাত ধরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন