রজনীকান্ত সেন এক বিস্মৃতপ্রায় কবি, সঙ্গীতকার, সুরকার ও গায়ক
মনোজিৎ কুমার দাস
(৬)
স্বদেশী আন্দোলনে তাঁর গান ছিল উদ্দীপনা জাগানোর
মন্ত্র।
৭
আগস্ট, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কলকাতার টাউনহলে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিলাতী পণ্য বর্জন এবং স্বদেশী পণ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বাংলার প্রখ্যাত নেতৃবর্গ। ভারতের সাধারণ জনগণ বিশেষতঃ আহমেদাবাদ এবং বোম্বের অধিবাসীগণ ভারতে তৈরী বস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু এ কাপড়গুলোর গুণগতমান বিলাতে তৈরী কাপড়ের তুলনায় তেমন মসৃণ ও ভাল ছিল না। কিছুসংখ্যক ভারতবাসী এতে খুশী হতে পারে না।। এই কিছুসংখ্যক ভারতীয়দের
উদ্দেশে রজনীকান্ত রচনা করেন তার বিখ্যাত দেশাত্মবোধক অবিস্মরণীয় গান -
মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই;
দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই। ----
এই একটি গান রচনার ফলে রাজশাহীর কবি রজনীকান্ত সমগ্র বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনের কবি হয়ে ওঠেন। এ গানটি রচনার ফলে পুরো বাংলায় গণ-আন্দোলন ও নবজাগরণের পরিবেশ হয়। গানের কথা, সুর ও মাহাত্ম্য বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করায় রজনীকান্ত দেশাত্মবোধক গান লিখতে আরো অনুপ্রাণিত হন। স্বদেশী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত গণমানুষেরা মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই; গানটিকে লুফে নেন ও কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে গাইতে
থাকেন। পরে তিনি আরো বেশ কয়েকটি একই ধরনের দেশাত্মবোধক গান লেখেন, আর সেগুলোও জনপ্রিয় হয়।
আমরা নেহাত গরীব, আমরা নেহাত ছোট,-
তবু আছি সাতকোটি ভাই,-জেগে ওঠ!
রজনীকান্ত সেন এক পর্যায়ে প্রার্থনা সঙ্গীত ও সাধন সঙ্গীত রচনায় নিজেকে নিবেদিত করেন। ঈশ্বরের রাতুল চরণে রজনীকান্তের হৃদয়ের গভীর থেকে
নিবেদিত করুণ আকুতি এভাবে ব্যক্ত করেন
তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে, মলিন মর্ম মুছায়ে,
তব পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক, মোর মোহ কালিমা ঘুচায়ে৷
প্রভু , বিপদ-হন্তা, তুমি দাঁড়াও রুধিয়া
পন্থা,
তব
শ্রীচরণতলে নিয়ে এস, মোর মত্ত বাসনা গুছায়ে।---
তাঁর লেখা এই প্রার্থনা সঙ্গীতটি কালজয়ী আসন লাভ করেছে। রজনীকান্ত
অকপটে কুন্ঠহীন চিত্তে ঈশ্বরের করুণা ভিক্ষা করছেন এই প্রার্থনা সঙ্গীতটিতে। আজও এই প্রার্থনা সঙ্গীতটি প্রাসঙ্গিক ও সর্বকালীন হিসাবে বিবেচিত। রজনীকান্ত সাধন সঙ্গীতে কীভাবে নিজেকে ঈশ্বরের
উদ্দেশে নিবেদন তা বুঝতে হলে রজনীকান্তের
অন্তরের দু:খ বেদনা, হতাশার কথাই মনে পড়ে। তাঁর লেখা ও গাওয়া
সাধন সঙ্গীত বুঝতে পারা যায় স্বার্থ্ময় জগতের সবক্ষেত্রে ক্লেদ, কালিমা ও প্রবঞ্চনা যা
কবিকে মর্মে মর্মে পীড়া দিয়েছে। যা থেকে কবি মনে নিদারুণ হতাশার সৃষ্টি হয়। সেই হতাশারই অনুরণন
আমরা দেখতে পাই তাঁর এ গানে—মাগো, আমার সকলি
ভ্রান্তি-----
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন