শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রজনীকান্ত সেন এক বিস্মৃতপ্রায় কবি, সঙ্গীতকার, সুরকার ও গায়ক । মনোজিৎ কুমার দাস । বাংলা- ৬১১


রজনীকান্ত সেন এক বিস্মৃতপ্রায় কবি, সঙ্গীতকার, সুরকার গায়ক 
মনোজিকুমার দাস
 (৫)
                                                                                                  
১৩০৪ সালে রাজশাহী থেকে সুরেশচন্দ্র সাহার সম্পাদনায় সাহ নামে একটি মাসিক পত্রিকার প্রকাশ ঘটেসাহ   পত্রিকায় প্রথম বছরে রজনীকান্তের পাঁচটি কবিতা প্রকাশিত বৈশাখ সংখ্যায়  সৃষ্টি- স্থিতি- লয় , জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায়  তিনটি কথা, আষাঢ় সংখ্যায়  তোমার আমার এবং অগ্রাহায়ণ সংখ্যায়  যমুনা-বক্ষে্  প্রকাশিত হয় এই পাঁচটি কবিতার মধ্যে  তোমার আমার হাসির কবিতা এই কবিতা লেখার পেছনে একটা ইতিহাস আছে রাজশাহীতে ওকালতি আরম্ভ করার পর রজনীকান্তের সঙ্গে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (ডি.এল.রায়) সঙ্গে পরিচয় হয় ১৩০১ কিংবা ১৩০২ সালেরদিকে সরকারী চাকুরী উপলক্ষ্যে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রাজশাহীতে অবস্থান করছিলেন এক সভায় ডি. এল. রায়ের কন্ঠে হাসির গান শুনে রজনীকান্ত মুগ্ধ হন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের  আমরা তোমরা  হাসির কবিতা ১৩০২ সালের  সাধনা  পত্রিকার কার্তিক সংখ্যায প্রকাশিত হলে রজনীকান্ত ১৩০৪ সালের  সাহ  পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায়  তোমরা আমরা  নামে একটি হাসির কবিতা লিখে দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতা  আমার তোমরা কবিতার জবাব দেন রজনীকান্ত যে দ্বিজেন্দ্রলালের মত হাসির কবিতা লিখতে পারদর্শী তার দৃষ্টান্ত দিতে গেলে সঙ্গে রজনীকান্তের কবিতাটির সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতাটিও উদ্ধৃতি দিতে হয়                                             
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের আমরা তোমরা : 
আমরা খাটিয়া বহিয়া আনিয়া দেই গো,
আর,  তোমরা বসিয়া খাও; 
 আমরা দুপরে আপিসে লিখিয়া মরি গো,
আর, তোমরা নিদ্রা যাও
 -------------
রজনীকান্ত সেনের তোমরা আমরা:                                                                                                              আমরা রাঁধিয়া বাড়িয়া আনিয়া দেই গো, 
আর তোমরা বসিয়া খাও,
আমরা দু-বেলা হেঁসেলে ঘামিয়া মরি গো, 
আর খেয়ে দেয়ে তোমরা নিদ্রা যাও------- 
কবি রজনীকান্তও এরপর থেকে হাসির গান লিখতে শুরু করেন এক সময় তিনি হাসির গানে খ্যাতিও লাভ করেন হাসির গান ছাড়াও রজনীকান্ত  ব্যঙ্গ কবিতা রচনায় পারঙ্গমতা দেখান  এখানে  তাঁর লেখা ব্যঙ্গ কবিতার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে 

বাজার হুদ্দা কিন্যা আইন্যা, ঢাইল্যা দিচি পায়;
তোমার লগে কেমতে পারুম, হৈয়্যা উঠছে দায়                                                                          
আরসি দিচি, কাহই দিচি, গাও মাজনের হাপান দিচি, 
চুল বান্দনের ফিত্যা দিচি, আর কি দ্যাওন যায়?
কলেজ জীবনের দিনগুলোতে তিনি গান লিখতেন অভিষেক অনুষ্ঠান সমাপনী বা বিদায় অনুষ্ঠানেই গানগুলো রচনা করে গাওয়া হতো তিনি তাঁর অতি জনপ্রিয় গানগুলো খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রচনা করতে সক্ষমতা দেখিয়েছিলেন তেমনি একটি গান রাজশাহী  গ্রন্থাগারের সমাবেশে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে রচনা করেছিলেন-                                                                                                                   
তব, চরণ নিম্নে, ৎসবময়ী শ্যাম-ধরণী সরসা; 
ঊর্দ্ধে চাহ অগণিত-মনি-রঞ্জিত নভো-নীলাঞ্চলা  
সৗম্য-মধুর-দিব্যাঙ্গনা শান্ত-কুশল-দরশা?-
১৫ বছর বয়সে কালীসঙ্গীত রচনার মাধ্যমে তাঁর অপূর্ব কবিত্বশক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ করে সঙ্গীত, সাহিত্য, নাটকে অভিনয় ইত্যাদিতে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন রজনীকান্তের রাজশাহীতে অবস্থানকালে তাঁর বন্ধু  বিখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় স্ত্রীর তাঁকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রেরণা দান করেন সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের ফলে তিনি ওকালতি পেশায় গভীর ভাবে মনোনিবেশ করতে পারেননি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...