মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

গদ্য । বাংলা ।। নবপর্যায়-৫৯৪ । অষ্টম বর্ষ । সংখ্যা-৭ । ২১-০৮-২০১৮

জলবায়ু উদ্বাস্তু 
সৌমিত্র চৌধুরী

পূর্ববর্তী প্রকাশের পর... 

 টিন্ডালেরর আবিষ্কারের ছত্রিশ বছর পর আরহেনিয়াস, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের উষ্ণতা সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করে প্রমাণ করলেন যে, জ্বালানী দহনে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে। নির্গত গ্যাস ঊর্ধ্বাকাশে না গিয়ে জমা থাকছে বায়ু মণ্ডলেএর ফলে গ্রহের উষ্ণতা বাড়ছে। তিনি বলছেন, ১৮৯৬ সালে কার্বন ডাই অক্সাইডের যা পরিমাণ, ভবিষ্যতে সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে ডিগ্রী সেলসিয়াস।
       এখনকার গবেষণার তথ্য প্রায় তাই। ভয়ংকর তথ্য। এখন উপায়? উপায় বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা হ্রাস করা জ্বালানীর দহন, গাড়ি এয়ারকন্ডিশন মেসিন এবং অন্য ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার
       এ তো অগ্রগতি তথা সভ্যতার কণ্ঠরোধ! এ কি সম্ভব? পৃথিবী জুড়ে চেষ্টা চলছে অসম্ভবকে সম্ভব করবার। একদিকে অগ্রগতি আরেক দিকে বিশ্ব উষ্ণায়ণ, এই দুয়ের সমঝোতার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত অনেক বিজ্ঞানী রাষ্ট্র নেতা। কয়লা ও জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে একাধিক দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে উদাসীনতাও লক্ষ করা গেছে অনেক দেশের কর্মকাণ্ডে
       আশার কথা, অধিকাংশ দেশের রাষ্ট্রনায়করা এখন বুঝতে পেরেছেন, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ন কমানো দরকার। চোখের সামনে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমাট বরফ গলতে দেখে, অনেক পাহাড় চূড়ার গ্লেসিয়ার নিশ্চিহ্ন হতে দেখে শিউরে উঠেছেন তারা। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে দেখে এখন বুঝতে পারছেন ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ণের রাশ টানা ভিন্ন অন্য পথ নেই।
        চিরাচরিত শক্তির উৎস--কয়লা বা তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে সৌর বিদ্যুৎ, বাতাসের শক্তি ইত্যাদিকে ব্যাবহার করতে হবে। দরকার কম জ্বালানি কাজে লাগিয়ে বেশী শক্তি উৎপন্ন করার (Energy efficient) কারিগরি এ সব না করলে বাঁচানো যাবে না পৃথিবীকে
       পূর্বভারতের এই প্রদেশে, আমাদের ঘাড়ের উপর শ্বাস ফেলছে বিশ্ব উষ্ণায়নের মারণ দানব। এখানেও বে-ঘর হচ্ছেন বহু মানুষ। ঘরছাড়া মানুষের কান্না শুনতে ভিন দেশে মালদিভ বা ক্যারিবিয়ানে ছুটতে হবে না। ঘরের কাছে সুন্দরবনে গেলেই চক্ষু কর্ণের বিবাদ ঘুচবে।         ঘোড়ামারা মউশানি দ্বীপে গেলেই আবহাওয়া উদ্বাস্তুদের কান্না শুনতে পাওয়া যাবে। জমি চাষবাস মৎস শিকার সব হারিয়ে ওখানকার মানুষ ভিনদেশী। কেউ সল্টলেকে রিক্সাওয়ালা। কাজ খুঁজতে কেউ পারি দিয়েছেন ব্যাঙ্গালোর কেউ কুয়েতে। দেশে ফিরে ভিটে মাটি ঘর দুয়ার খুঁজে পাবে না কেউ। উদ্বাস্তু ছাড়া এদের কি-ই বা বলা যায়। এঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তু।
--০—
( সমাপ্ত )


লেখক~ ডসৌমিত্র কুমার চৌধুরী, এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা, কলকাতা 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...