জলবায়ু উদ্বাস্তু
সৌমিত্র চৌধুরী
যুদ্ধ
বিগ্রহ বহু মানুষকে ভিটে ছাড়া করেছে। এক দেশ থেকে সীমানার ওপারে খেদিয়ে দেওয়া হয়েছে মানুষকে। যুদ্ধে বিজয়ী মানুষের পাশে
বিজিত ঠাই পায় নি। পরাজিত মানুষ যুদ্ধবন্দী, কখনও বা বিধর্মী।
অতএব চলে যেতে হবে অধিকৃত দেশের সীমানার ওপার। অলঙ্ঘ আদেশ।
অমান্য মানেই কামান গোলা বন্দুক ফৌজি বেয়নেট। এফোঁড়ওফোঁড়
হবে বিধর্মী বা বিজিতের দেহ।
সীমানার
ওপারে অর্থাৎ অন্য দেশে পা-রাখা মানুষগুলো রিফুউজি, উদ্বাস্তু। তারা সব খোয়ানো
মানুষ। ভিন দেশে বিরুদ্ধ পরিবেশে প্রাণ বাঁচানোর কঠিন লড়াইয়ে
জর্জরিত প্রাণ। সামান্য খাদ্য আর আত্মপরিচয় খুঁজে নেবার দীর্ঘস্থায়ী
সংগ্রামে মনুষ্যতর জীবন যাপনে বাধ্য তারা।
ইতিহাসে
তেমনি ঘটেছে বারবার। পাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে কোটি কোটি মানুষ। ইরাকে
আমেরিকার বোমা বর্ষণ বাস্তুচ্যুত করেছে কোটি কোটি মানুষকে। কিছু মানুষ আশ্রয়
পেয়েছে গ্রীস বা তুরস্কে।
বর্তমান
এই দশকে সিরিয়া থেকে উৎখাত হয়েছে ষাট লক্ষেরও বেশী মানুষ। আফগানিস্থান, সুদান
থেকেও পঞ্চাশ লক্ষ লোক বিতাড়িত হয়েছে। উদ্বাস্তু নামের ঘৃণার তকমা নিয়ে আজও দাঁতে
দাঁত চেপে পৃথিবীর বহু দেশে আশ্রয় পাওয়া মানুষগুলো প্রাণ বাঁচানোর সংগ্রাম করছেন। আশ্রয়ের
প্রত্যাশায় এক দেশ থেকে গলা ধাক্কা খেয়ে ডিঙি নৌকায় সমুদ্র পারি দিয়ে পা রাখবার
চেষ্টা করছেন অন্য দেশের মাটিতে।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পরেও – ইউনাইটেড নেশন্স, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি গঠন
হলেও উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত অধুনা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। বিষয়টি মূলত
রাজনৈতিক বা ধর্মীয়। বহু সমস্যায় জর্জরিত এক আন্তর্জাতিক মানবীয় সঙ্কট যার ব্যাপ্তি
বহু ব্যাপক। অবশ্য এ সব প্রসঙ্গ বর্তমান নিবন্ধের অন্তর্গত নয়।
বর্তমান
নিবন্ধের বিষয় অধুনা বিশ্বের এক অন্য ধরনের উদ্বাস্তু কাহিনী। ধর্মের নিরিখে,
রাজনীতি বা যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে উদ্ভাবিত নয়। এর সৃষ্টি আবহাওয়া বা জলবায়ুর
পরিবর্তনের কারণে।
‘জলবায়ু
উদ্বাস্তু’, ইংরাজিতে ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’ বর্তমান বিশ্বের আর এক জটিল সমস্যা।
আন্তর্জাতিক এই সমস্যাটি হাল আমলের হলেও এর ব্যাপকতা বহু বিস্তৃত। আন্তর্জাতিক
রেডক্রস ফেডারেশনের সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমান দুনিয়ায় জলবায়ু উদ্বাস্তুর
সংখ্যা আড়াই থেকে পাঁচ কোটি।
( চলছে...)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন