জলবায়ু উদ্বাস্তু
সৌমিত্র চৌধুরী
পূর্ববর্তী প্রকাশের পর...
বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে নিজের খাদ্য বানায় (Photosynthesis) গাছ আর বাতাসে মুক্ত করে অক্সিজেন। বায়ু
মণ্ডল শুদ্ধ করবার প্রাকৃতিক সম্পদ বৃক্ষ।
এ তথ্য জেনেও দুনিয়া ব্যাপী নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করেছে মানুষ। গাছ কাটার
সঙ্গে সঙ্গে চলেছে তেল কয়লা ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানীর দহন। তৈরি হয়েছে কার্বন ডাই
অক্সাইড। সব মিলিয়ে বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসটির আধিক্য বেড়েছে বহু
গুণ। বায়ু মণ্ডলে এই গ্যাসটির আধিক্যই বাড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবী গ্রহের তাপমাত্র।
এতটাই বৃদ্ধি হয়েছে যে এর উপস্থিতি বিপদ সীমা অতিক্রম করে সর্বনাশের ডঙ্কা
বাজাচ্ছে।
ছোট্ট একটা গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড। কোন কৌশলে
এটি বায়ুমণ্ডল বা সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়? কারণ গ্যাসটি তাপ শোষণ করে রাখে। কেমন করে? একশ আঠান্ন বছর আগে পদার্থবিদ জন
টিন্ডাল বহু প্রমাণ হাতে নিয়ে প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলেন। তিনটে
মাত্র পরমানু -- একটা কার্বন এবং দু’টো অক্সিজেন -- এ দিয়ে তৈরি রাসায়নিক যৌগ
কার্বন ডাই অক্সাইড। গ্যাসটি শুষে নেয় অবলোহিত (infrared light) আলো।
সূর্যের
সাত রঙের বর্ণালীতে দীর্ঘতম তরঙ্গ দৈর্ঘ লাল আলোর। কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়
লাল আলো এবং এর চাইতে বেশী
তরঙ্গ দৈর্ঘের আলো। ফলে
বাতাস উত্তপ্ত হয়। উত্তাপ ঊর্ধ্বাকাশে না গিয়ে মাটিতে ফিরে আসে। এরই
নাম গ্রিন হাউস এফেক্ট (Green
house effect)। গ্রিন হাউস গ্যাস বহু সদস্য
বিশিষ্ট। এই পরিবারে আছে কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাস্প,
মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন। এরা ভূপৃষ্ঠে তাপ ফিরিয়ে আনে। তবে এ
কাজে সবচাইতে বেশি ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাস্পের।
উষ্ণায়নের রহস্য উদ্ঘাটন করেছিলেন বিজ্ঞানি আরহেনিয়াস।
বাতাস দু’ভাবে তাপ ধরে রাখে। বাতাসের মধ্য দিয়ে তাপ প্রবাহিত হবার সময় (selective diffusion) এবং তাপ
শোষণের (absorption) মাধ্যমে। বাতাসের অন্য উপাদান গুলোয়,
দ্বি-পারমানিক নাইট্রোজেন অক্সিজেন—তাপের প্রভাবে কম্পন (vibration) ঘটে (দুই পরমানুর মধ্যেকার কম্পন)। ফলে
প্রচুর পরিমান তাপ শোষণ করতে পারে তারা। কিন্তু বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড এবং
জলীয় বাস্প শোষণ প্রক্রিয়ার
(absorption) মাধ্যমে তাপ গ্রহণ করে। এদের (CO2, H2O) পরমাণু গুলো কাঁপতে থাকে বর্ণালির
অবলোহিত (Heat, Infrared) অঞ্চলে। কাঁপতে থাকা থাকা একটি অনু তাপ মোচন (Emission) করলে আরেকটি অনু সেটি গ্রহণ করে কাঁপতে থাকে (vibrate)। এই প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ তাপ
শোষণ–মোচন-শোষণ
(Absorption-emission-absorption) করে কার্বন
ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাস্প পৃথিবী তলে তাপ ধরে রাখে।
( চলছে ...)
লেখক~ ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা, কলকাতা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন