বুড়ো শিকড়ের আত্মকথন
রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়
৫
জীবনের প্রশ্নগুলো বড়ো অদ্ভুত।আর প্রকৃতি ও সময়ের সহাবস্থান যতোটাই জটিল, ততোটুকুই সহজ।এসব মেঘরোদের সমাধান বুঝতে বুঝতেই একদিন মানুষের ভাষা বদলে যায়।প্রথম প্রথম এক অদ্ভুত গহ্বরে থাকা আমাদের নায়ক এসব ঠাওর করতে পারে নি।তারপর উঁচু হতেহতে যখন পাহাড়, ঝর্ণা, সমুদ্র, নদী, মাঠ, বরফ, আগ্নেয়গিরি ~ এসব ছাড়িয়ে সে পৃথিবীর সম্পূর্ণ ব্যাস জড়িয়ে ধরে, বুঝতে পারে লোভ-লালসার ভাঁওতাবাজীর খেলা।আক্রমণ বা প্রতিআক্রমন কোনোটাই আদপে বিষয় নয়।মুল বিষয় হলো উদ্বৃত্ত বিশেষণ।ভাষা আলাদা তাই সীমারেখা টানাটানি।শুধু চুপিসারে নৈশব্দের গল্প যারা করে, তারাই বোঝে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা।এভাবেই একেএকে সে সাক্ষ্যের পর সাক্ষ্য তুলে রাখে।তার চামড়া ও খসে পড়া উদ্বৃত্ত পাতায় বিছিয়ে রাখে সৃষ্টি ও ধ্বংসের দ্বান্দিক দলিল।মাটির কোনো অতিরিক্ত পরিচয় নেই, তার পরিচয় মাটি।জলের কোনো অবশিষ্ট পরিচয় নেই, সে কেবলই জল।আকাশের কোনো নির্দিষ্ট পরিচয় নেই, সে এক বিস্তীর্ণ অসীমের অংশবিশেষ।আগুনের আলাদা করে শ্রেণি চরিত্র নেই, তার বিশেষ্য ও বিশেষণ সে আগুনই।জীবন তৈরির প্রতিটি উপাদান এক ও অভিন্ন হলেও, মানুষের সমস্যা কোথায়।সে যতো উঁচু হয়, বৃদ্ধ হতে থাকে।যতো বৃদ্ধ হয়, জীবনী বাড়ে।হয়তো এটাই সভ্যতার প্রকৃত দায়বদ্ধতা।নাড়ির কম্পনের এ এক বেজায় উপলব্ধি।হয়তো এভাবেই একদিন নাড়ির কম্পন আলাদা হবে শরীর থেকে, ধুকপুক আলাদা হবে ফুসফুস থেকে, নিঃশ্বাসের পৃথককরন ঘটবে রন্ধ্রের জলখোর কোষগুলো থেকে।ঝাপসা আলোতে সে দেখতে পায় শরীর শরীরের আদর থেকে মুছে ফেলছে নাম।না।এই মুহূর্তে পৃথিবীর বুকে সঙ্গমের উষ্ণতা নেই, আছে গরম তাপ ও তাজা রক্তের বাষ্প।আরো চাহিদা।আরো চাই।আরো বেশি কিছু চাই।আরো মাংস।আরো মজ্জা।আরো লসিকা।মাংসাশী পাকস্থলীর সংখ্যা কখন যে বেড়ে গেলো, তা অনুভবের আগেই আমাদের বৃদ্ধ নায়ক একদিন দেখে আশেপাশের রঙিন জাদুগুলো কালো পর্দায় ঢেকে দিয়েছে কেউ।তার ছায়া মুছে গিয়ে জায়গা নিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইনবোর্ড ~ মাচানতলা।সে ভাবে, হয়তো এবার উঁচু থেকে তার ছোটো হবার পালা।শিকড়ের গায়ে এখনো লেগে আছে আদিম গুহামানবীর গন্ধ।একটা তড়িৎ বিস্ফোট কেবল।ছিটকে যাবে সমস্ত ক্রিয়াপদ ও ক্রিয়াহীন বলয়।ঘোরের মধ্যে চলছে যেনো সবকিছুই।আর সময় টুকরোটুকরো না হলে হয়তো এই ঘোর কাটবে না।ঠিক এমনই এক নাইট্রিক অবস্থান্তর থেকে এলডোরাডো অসুখে ক্রমশঃ নামতে থাকে বৃদ্ধ নায়ক।নীচে আরো নীচে।গভীরে ক্রমশঃ আরো গভীরে।কেবল অন্ধকারেই পুঁতে ফেলা যায় সৃষ্টি প্রোথনের বীজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন