শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮

গদ্য । বাংলা ।। নবপর্যায়-৫৯০ । অষ্টম বর্ষ । সংখ্যা-৩ । ১৭-০৮-২০১৮

জলবায়ু উদ্বাস্তু 
সৌমিত্র চৌধুরী

পূর্ববর্তী প্রকাশের পর... 
উদ্বাস্তু কারা? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ (1951 Geneva Refugee Convention ) বলল, ‘নিজের দেশের বাইরে স্থান পাওয়া একজন মানুষ যার স্বদেশে ফিরলে জাতি ধর্ম রাজনীতি বা মতাদর্শের কারণে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে’   
       এই যুক্তিতে আবহাওয়ার কারণ হেতু বাস্তুচ্যুতদের উদ্বাস্তু বলতে নারাজ অনেকে। কারণ, আবহাওয়া উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরলে শাস্তির মুখে পড়তে হয় না। কিন্তু দেশে ফিরতে পারাটাই যে সমস্যা! একরকম আসম্ভবদেশটাই যে বসবাসের অনুপযুক্ত। কোথাও দেশের মানচিত্র গ্রাস করেছে মরুভূমি, কোথাও আবার তলিয়ে গেছে জলের তলায়। অতএব, মানুষ নিজ ভূমি থেকে বিতারিত। 
       কম নয় এই আবহাওয়া উদ্বাস্তুর সংখ্যা। বর্তমান বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটী।  প্রতি বছর, ২০০৮ সাল থেকে, দুই কোটি পনের লক্ষ মানুষ আবহাওয়া বদলে যাবার কারণে দেশ ছারতে বাধ্য হয়েছেন। বছরে বছরে লাফ দিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে চলেছে।
       কারণ, কোথাও জলোচ্ছ্বাস, সামুদ্রিক ঝড়। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, হিউস্টোন বা ফ্লোরিডার হঠাৎ বিধ্বংসী ঝড় বাস্তুচ্যুত করেছিল বহু মানুষকে। কোথাও ধ্বংস নেমে আসছে ধীর গতিতে। ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে সমুদ্র তীরের গ্রাম শহর নগর। গোটা একটা দেশ ঢুকে যাচ্ছে সমুদ্রের জঠরে। কখনও বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বা সরকারী বদান্যতায় আশ্রয় মিলছে। কিন্তু রুটিরুজির সংস্থান বিহীন বড় কষ্টের সে জীবন।  কোথাও মানুষ সরকারী সাহায্য বিনা যেথায় যেমন সুযোগ পাচ্ছেন, চলে যাচ্ছেন। 
       ‘এই স্থানান্তরিত মানুষদের রিফুজি ছাড়া আর কী বলতে পারি’? এমন প্রশ তুলেছেন বহু বিজ্ঞানী ও সমাজকর্মীএরা জলবায়ু রিফুজি না স্থানান্তরিত মানুষ? বিতর্ক বহমান।
       যেমনি হোক আইনি সংজ্ঞা, জলবায়ু উদ্বাস্তুরা ঘর ছাড়া মানুষ। ভিটেমাটি খুইয়েছেন নিজের গ্রাম, নিজের বেড়ে ওঠা শহর ছারতে বাধ্য হয়েছেনযে শহরে লেখা পড়া শিখেছেন, ভোট দান করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন তারা, সেই শহরটার অস্তিত্বই নেই। কোথাও বা স্বদেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশের অজানা পরিবেশে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই করছেণ এই উদ্বাস্তুরা
       একটা গোটা দেশের ক্রমশ জলের নিচে তলিয়ে যাওয়া, ভয়ঙ্কর ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া এসবই ঘটছে বর্তমান বিশ্বে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে। 

       উষ্ণায়ন ব্যাপারটি কতটা মারাত্মক বোঝাতে কয়েক বছর আগের (১৯০৯) মালদিভ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটা কথাই যথেষ্টমালদ্বীপ সমুদ্র গর্ভে ক্রম বিলিয়মান। দ্বীপ রাষ্ট্র তার ১২০০ দ্বীপ, সারে তিন লক্ষ অধিবাসী, দীর্ঘ কালের গড়ে ওঠা সভ্যতা সব নিয়ে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র গর্ভে। শঙ্কিত দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্ববাসীকে বলছেন (Copenhagen Climate Summit in 2009), ‘যদি উষ্ণায়ন আর দুই ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বাড়তে দাও, তাহলে জানবে, তোমরা আমাদের হত্যা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছ’
( চলছে ...)


লেখক~ ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা, কলকাতা  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Registration (Online)

Trainee REGISTRATION (ONLINE)

                                                                                    👇           👉             Click here for registration...